হাদিসের আলোকে পবিত্র জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল।।

মুসলিমদের জন্য সপ্তাহের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ দিন হল শুক্রবার।দিনটিতে মুসলিমদের জন্য সাপ্তাহিক ইদের দিন হিসেবে অভিহিত করা হয়।এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থগুলোতে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত;রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম।এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে।এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।
———(মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)

এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “জুমার দিন দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত।”
———-(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)

Getty Images

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমলঃ

মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের অনেক আমল হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে।তন্মধ্যে কিছু আমল ধারাবাহিক উল্লেখ করা হচ্ছে।

গোসল করা।
উত্তম পোশাক পরিধান করা।
সুগন্ধি ব্যবহার করা।
মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা।

এই চারটি আমলের কথা একসঙ্গে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,”যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সমস্ত সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে।”
———–(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)

যথাসম্ভব দ্রুত মসজিদে যাওয়াঃ

এই দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে দ্রুত মসজিদে যাওয়া। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,”হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো।”
————(সুরা জুমআ, আয়াত : ৯)

রাসুল (সা.) বলেছেন,”জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি যে একটি গাভী কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন।”
———-(বুখারি, হাদিস : ৯২৯)

সুরা কাহফ তিলওয়াত করাঃ

মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সুরা কাহফ তিলওয়াত করা।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত;রাসুল (সা.) বলেন,”যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে।”
————–(আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২
)

বেশি বেশি দরুদ পাঠ করাঃ

এই দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।

এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, “দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম।এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সমস্ত সৃষ্টিকে বেহুশ করা হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে।”
———- (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়াঃ

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,”জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে,তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন।”
————- (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন,”রাসুল (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাস‍ুল (সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।”
————-(বুখারি)

আবু দারদা ইবনে আবু মুসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি;তিনি বলেন,”আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে বলেছেন, ইমামের মিম্বরে বসার সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়টিই সেই বিশেষ মুহূর্ত।”
————-(মুসলিম, মিশকাত)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত;রাসুল (সা.) বলেছেন,”ইমাম মিম্বরে বসা থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত।”
———— (মুসলিম, ইবনু খুজাইমা, বয়হাকি)

রাসুল (সা.) থেকে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জুমার দিনে ১২ ঘণ্টা রয়েছে। তাতে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর ক‍াছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ১০৪৮, নাসাঈ, হাদিস নং : ১৩৮৯)

আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, শুক্রবারে আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ যাদুল মাআ’দ-এ বর্ণিত আছে, জুমার দিন আছরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। (২/৩৯৪)

ইমাম আহমদ (রহ.)-ও একই কথা বলেছেন। (তিরমিজির ২য় খণ্ডের ৩৬০ নং পৃষ্ঠায় কথাটি উল্লেখ আছে)

মোট কথা, জুমার দিনে বিশেষ কিছু মুহূর্ত রয়েছে, যে সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন।সেই সময়গুলো আমাদের তালাশ করা উচিত।সম্ভাব্য সময়গুলো হলঃ
জুমার নামাজে সুরা ফাতিহার পর ‌আমিন বলার সময়।আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে।মুয়াজ্জিন আজান দেয়ার সময়।জুমার দিন সূর্য ঢলে পড়ার সময়।ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়ানোর সময়।উভয় খুতবার মধ্যবর্তী সময়।জুমার দিন ফজরের আজানের সময়।

আলোচকঃবিভাগীয় প্রধান : উলূমুল হাদিস বিভাগ

জহুরা কামাল ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top