মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন অতি যত্নে।সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না নিয়েই মানুষের জীবণ।জীবণে চলার পথে অনেক সময় আমাদের উপর বিপদ আপাতিত হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا‘নিশ্চয় কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্থি।’ (সুরা ইনশিরাহ : আয়াত ৫)
মানুষ সুখে কিভাবে শুকরিয়া আদায় করবে,কিংবা,দুঃখে কিভাবে ধৈর্য্যধারণ করবে তা বিস্তারিত বলা আছে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে।ইসলাম তো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধা।
বিপদ-আপদ আসলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আবার বাহ্যিক দৃষ্টিতে কখনো একজন মানুষ আরেক জন মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার মানুষের কৃতকর্মের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে সমগ্র মানবজাতি বিপদের দ্বারা আক্রান্ত হয়।
এ বিপদ-আপদের মাধ্যমেই মানুষ তার গোনাহ থেকে মুক্তি পায়। আর যদি বিপদে আক্রান্ত মানুষের গোনাহ না থাকে তবে ওই ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা আরো বেড়ে যায়। তাই মুমিনদের হতাশ হয়ে মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে আল্লাহর রহমত পেতে থাকে।
হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে;হজরত আবু সাঈদ খুদরি ও হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,”মুসলিম ব্যক্তির ওপর যেসব যাতনা রোগ ব্যধি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দুঃশ্চিন্তা কষ্ট ও পেরেশানি আপতিত হয়। এমন কি যে কাটা তার দেবে বিদ্ধ হয় এ সবের দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।” (বুখারি)
বিপদ-আপদ,বালা-মুসিবত আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য।এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা বাকারার ১৫৫ ও ১৫৬ আয়াতে ঘোষণা করেছেন-“এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয় ক্ষুধা সম্পদ জীবনের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। হে নবি! ধৈর্যধারণকারীদের আপনি সুসংবাদ দিন যখন তারা বিপদ পড়ে তখন বলে নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং তার কাছেই ফিরে যাবো।”
যুগে যুগে নবী-রাসুল, অলি-আউলিয়া ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ওপর বিপদ-আপদ এসেছে।তারা নানান বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন।তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ধৈর্যশীল বান্দা ও পয়গাম্বর হলেন হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম।
হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম,তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার সব সম্পদ সন্তান-সন্তুতি ও স্ত্রীদের হারিয়েছিলেন।রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় এলাকার লোকজন তাকে নিজ এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছিল। তার সাথে তার এক স্ত্রী রহিমা ছাড়া আর কেউ ছিল না।
রোগাক্রান্ত হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের সারা শরীরের পচন ধরে পোকার সৃষ্টি হয়।তবুও তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহকে ভুলে যাননি,ধৈর্যহারা হননি এবং আল্লাহর কাছে তাওবা ইসতেগফার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করেছেন। আল্লাহর দয়ায় তিনি রোগ মুক্ত হয়ে পুনরায় আবার তার সব সম্পদ সব কিছু তিনি ফিরে পেয়েছিলেন।
আল্লাহ পাকের আরেক পয়গাম্বর হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম,যিনি নিজ অঞ্চল ত্যাগ করার সময় নৌকায় পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নদীতে পতিত হন।নদীতে পতিত হওয়ার পর বড় একটা মাছ তাকে গিলে ফেলে।এমন বিপদেও হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত ছিলেন না।
সে প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা আম্বিয়ায় তুলে ধরেন-আর মাছওয়ালার কথা স্মরণ কর।যখন সে আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে লোকদের ওপর রাগ করে চলে গিয়েছিল এবং বিশ্বাসী ছিল যে,আমি তার ওপরে কোনোরূপ কষ্টদানের সিদ্ধান্ত নেব না।অতপর সে মাছের পেটে ঘন অন্ধকারের মধ্যে আহ্বান করল।(হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম বললেন)-لا إِلَهَ إِلا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَউচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জ্বালিমিন।অর্থ :‘হে আল্লাহ! তুমি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র।আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভূক্ত।অতঃপর আমি তার আহ্বানে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুঃশ্চিন্তামুক্ত করলাম।আর এভাবেই আমি বিশ্বাসীদের মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭-৮৮)
এ দোয়াটি হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামের দোয়া বা দোয়া-ই ইউনুছ নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বিপদগ্রস্ত কোনো মুসলমান যদি নেক মাকসুদ হাসিলের জন্য এ দোয়ায়ে ইউনুছ পড়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সে দোয়া কবুল করেন।”
মানুষ অনেক সময় নিজ নিজ ঘরে,কর্মস্থলে কিংবা চলার পথে অনেক বিপদ-আপদে পতিত হয়।বড় বড় বিপদের সম্মুখীন হয়।এমন বিপদের সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কিংবা অধৈর্য হয়ে নিজেরকে বিপদ মুক্ত করার জন্য কারো প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে দিক-বিদিক ছুটোছুটি করে।
এতে মানুষ যেমন নিজের জীবনে প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়ে আবার অন্যের জীবনকে করে তোলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।এ সব বিপদ-আপদের মুহূর্তে ধৈর্য্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়া এবং বিপদমুক্ত থাকতে তাওবা ইসতেগফার পড়া এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করাই হলো মুমিন বান্দার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
মনে রাখতে হবে,মানুষের দুনিয়ার এ জীবন খুব অল্প দিনের।মানুষের উচিত সুখের সময় আনন্দে আত্মহারা না হয়ে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করা।আর তার নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করা,আর দুঃখ নিয়ে হতাশ না হয়ে বেশি বেশি নেক আমল করা,তাওবা-ইসতেগফার করা। উত্তম ধৈর্যধারণ করা ও আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।
কেননা নেক আমলের মাধ্যম বান্দার বালা-মুসিবত দূর হয়। দান-সাদকার মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হয়।আর আল্লাহ তার বান্দাদের অতি প্রিয় করতে অনেক সময় বিপদের পরীক্ষায় ফেলে থাকেন।ধৈর্য ও ঈমানের পরীক্ষা নেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণের মাধ্যমে তারই কাছে সাহায্য চাওয়ার তাওফিক দান করুন। তার কাছেই তাওবা ও ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। মহামারি করোনা থেকে হেফাজত করুন।আমিন।
সূত্রঃজাগোনিউজ।