আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা!!

বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা

উপজেলা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অন্যতম একটি স্তর।বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে গতিশীল করতে দেশের কয়েকটি বড় অঞ্চলকে বিভাগ,বিভাগকে আবার কয়েকটি জেলায় এবং জেলাকে কয়েকটি উপজেলাতে বিভক্ত করা হয়েছে।আজ জানবো আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা সম্পর্কে।

বর্তমানে বাংলাদেশের উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫ টি।সর্বশেষ মাদারীপুরের ডাসার,সুনামগঞ্জের মধ্যনগর এবং কক্সবাজারের ঈদগাঁহ থানাকে উপজেলাতে উন্নীত করা হয়েছে।

“ফটিকছড়ি উত্তর” নামে আরও একটি উপজেলার অনুমোদনও প্রক্রিয়াধীন।

চলুন আজ জেনে নেই আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।

১.শ্যামনগরঃ (১৯৬৮.২৪ বর্গ কি.মি)

বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার উপজেলা শ্যামনগর।এটি আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা।
এটির আয়তন ১৯৬৮.২৪ বর্গকিমি।তবে উপজেলাটির মূল ভূখন্ড মাত্র ৪৮৩.১১ বর্গকিমি,বাকি ১৪৮৫.১৩ বর্গকিমিজুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত।উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে সুন্দরবন অবস্থিত।

এর পূর্বে রয়েছে আশাশুনি ও খুলনার কয়রা উপজেলা,পশ্চিমে ভারতের চব্বিশ পরগণা,উত্তরে কালিগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিণে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর।

১ টি পৌরসভা,১২ টি ইউনিয়ন,২৩৩ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত উপজেলাটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার।শিক্ষার হার ৭৪.৮২%।
মুন্ডা,ভগবেনে,চন্ডাল,কৈবর্ত সহ বেশকিছু উপজাতিও বাস করে অঞ্চলটিতে।

ঐতিহাসিকভাবেও এলাকাটি অনেক সম্বৃদ্ধ ছিলো।এটি একসময় ধুমঘাট রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিলো।

উপজেলাটির দর্শনীয় স্থান হিসেবে সুন্দরবন,প্রতাপাদিত্যের রাজধানী,জাহাজঘাটার নৌ-দূর্গের ধ্বংসাবশেষ,গোপালপুর রামকৃষ্ণ মন্দির,ঈশ্বরীপুর শাহী মসজিদ হাম্মামখানা,বংশীপুর শাহী মসজিদ,যীশুর গীর্জা,যশোরেশ্বরী মন্দির,মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত উল্লেখযোগ্য।

২.বাঘাইছড়িঃ (১৯৩১.২৮ বর্গ কি.মি)

পাহাড়-পর্বত আর বনাঞ্চলে ঘেরা রাঙ্গামাটির একটি উপজেলা বাঘাইছড়ি।
আয়তনে এটি দেশের ২য় বৃহত্তম জেলা,যার আয়তন ১৯৩১.২৮ বর্গকিমি।এটি ১৯৬৫ সালে থানা ও ১৯৮৩ সালে উপজেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
রাঙ্গামাটি হতে উপজেলাটির দূরত্ব ১৪৬ কিমি।

এখানকার কাচালং অঞ্চলের গভীর অরণ্যে একসময় প্রচুর বাঘের উপদ্রব ছিলো।সাথে অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া থাকায় এলাকাটির নামকরণ বাঘাইছড়ি করা হয়।

এর পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য,পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা,উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও বরকল উপজেলা অবস্থিত।

১ টি পৌরসভা,৮ টি ইউনিয়ন,৩০৩ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত উপজেলাটির জনসংখ্যা মাত্র ১ লক্ষ ৭ হাজার।
ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বৌদ্ধ ৬৯.৬৯%, মুসলিম ২৩.৩২%, হিন্দু ৫.৫%,খ্রিস্টান ১.৪৯%।
স্বাক্ষরতার হার ৬৭.৭২%।
চাকমা,মারমা,ত্রিপুরা,পাংখুয়া,লুসাই,রাখাইন,খিয়াং উপজাতির বাস এখানে।

উপজেলাটির দক্ষিণাংশে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হ্রদ কাপ্তাই অবস্থিত।
দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আর্য্যপুর ধর্মোজ্জ্বল বিহার,সাজেক ভ্যালি,কংলাক পাহাড়,কাপ্তাই বাঁধ উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন: আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি জেলা।

৩.কয়রাঃ (১৭৭৫.৪১ বর্গ কি.মি)

সুন্দরবনের কোলঘেষা খুলনা জেলার অন্তর্গত আরেকটি উপজেলা হলো কয়রা।

১৯৭৯ সালে এটি থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৮৩ সারে উপজেলাতে উন্নীত হয়।

কয়রা বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম উপজেলা,যার সুন্দরবনসহ আয়তন ১৭৭৫.৪১ বর্গকিমি।আর সুন্দরবন বাদে ২৬৩.১২ বর্গকিমি।এটি খুলনা থেকে ৯৯ কিমি দূরে অবস্থিত।

এর পূর্বে দাকোপ উপজেলা,পশ্চিমে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা,উত্তরে পাইকগাছা আর দক্ষিণে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

৭ টি ইউনিয়ন আর ১৩৩ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত উপজেলাটির জনসংখ্যা ২ লক্ষ ২০ হাজার।
এদের মধ্যে মুসলিম ৭৪.২৯%,হিন্দু ২৫.৩৫% এবং অন্যান্য ধর্মবালম্বী ০.৩৬%।

এছাড়া মুন্ডা,মাহাতো ইত্যাদি আদিবাসীদের বাসও রয়েছে এখানে। এখানকার মানুষের গড় শিক্ষার হার ৭৬.০৯%।

এলাকাটি অত্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ।ঘুর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস,নদীভাঙন,লবনাক্ততা,স্বাদু পানির অভাব এখানকার দৈনন্দিন সমস্যা।
২০০৭ সালের সিডরে অঞ্চলটির সামান্য ক্ষতি হলেও ২০০৯ সালের সাইক্লোন আইলাতে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এলাকাটির দর্শনীয় স্থান হিসেবে সুন্দরবন,মসজিদকুড় মসজিদ,রাজা প্রতাপাদিত্যর বাড়ি,৩৮ বিঘা দিঘি,কাছারিবাড়ি বটবৃক্ষ,বুড়ো খাঁ মসজিদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৪.হাতিয়াঃ (১৫০৭.৩৫ বর্গ কি.মি)

বাংলাদেশের মূল ভুখন্ড থেকে ১৭ কিমি দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত সবচেয়ে বড় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া।

আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা র মধ্যে এটি চতুর্থ।উপজেলাটির আয়তন ১৫০৭.৩৫ বর্গকিমি।এটি নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত।

দ্বীপটির আনুমানিক বয়স প্রায় ৫-৬ হাজার বছর।তবে প্রমত্তা মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের বিশাল দাপটের মুখে প্রতিনিয়ত ভাঙা-গড়ার কারণে এর পূর্ববর্তী কোনো নিদর্শনই অবশিষ্ট নেই।

উপজেলাটির পূর্ব ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর,পশ্চিমে মনপুরা এবং উত্তরে সুবর্ণচর অবস্থিত।

১ টি পৌরসভা,১১ টি ইউনিয়ন,৬২ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার।
যার মধ্যে মুসলিম ৯৩.৮৫%, হিন্দু ৬.১৩%।শিক্ষার হার ৬৪.৪০%।

হাতিয়া গরু ও মহিষের দুধের দই উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
বাংলাদেশের পর্যটন ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলটি।

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান,ডোমার চর,কাজীবাজার,ভাসানচর,মেঘনা নদীর মোহনা,জাহাজমারা,কমলার দীঘি,স্বর্ণদ্বীপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৫.মোংলাঃ (১৪৬১.২২ বর্গ কি.মি)

সুন্দরবনের তীরে অবস্থিত মোংলা বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত উপজেলা।
এটি বাংলাদেশের ৫ম বৃহত্তম উপজেলা যার আয়তন ১৪৬১.২২ বর্গ কিমি।

মোংলা ১৯৭৬ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়,যা ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়।
খুলনা থেকে এর দূরত্ব ৫৩ কিমি,বাগেরহাট থেকে ৩৭ কিমি।

জনৈক মোঙ্গল ঋষির নামানুসারে গ্রিক জাহাজের এক নাবিক এলাকাটিকে মোংলা হিসেবে নামকরণ করেন।

এর পূর্বে মোড়েলগঞ্জ,শরণখোলা উপজেলা,পশ্চিমে খুলনার দাকোপ উপজেলা,উত্তরে রামপাল উপজেলা এবং দক্ষিণে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

১ টি পৌরসভা,৬ টি ইউনিয়ন এবং ৮৩ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত উপজেলাটির জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৫৯ হাজার।
এদের মধ্যে মুসলিম ৭১.৩১%,হিন্দু ২৫%।

এখানে গারো,হাজং,কোচসহ বেশকয়েকটি উপজাতির বাস রয়েছে।

শিক্ষার দিক দিয়েও মোংলা অগ্রগণ্য।উপজেলাটির শিক্ষার হার ৮১.২২%।

দেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা এই উপজেলাতেই অবস্থিত,যেটি ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এখানকার দর্শনীয় স্থান হিসেবে সমুদ্র বন্দর,দুবলার চর,হিরণ পয়েন্ট,ইপিজেড,করমজল,মেছের শাহ জামে মসজিদ,সেল পলের গীর্জা,সুন্দরবন জাদুঘর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন: আয়তনে বাংলাদেশের ছোট দশটি জেলা।

৬.চরফ্যাশনঃ (১১০৬.৩১ বর্গ কি.মি)

ভোলা জেলার অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের অসংখ্য বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চর নিয়ে চরফ্যাশন উপজেলা গঠিত।

এর পূর্বে মনপুরা দ্বীপ,পশ্চিমে পটুয়াখালীর দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা,উত্তরে লালমোহন ও তজুমুদ্দিন উপজেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

উপজেলাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে মোটামুটি ১১-১৮ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।মোট আয়তন ১১০৬.৩১ বর্গকিমি।

এটি কখনও নোয়াখালী,কখনও বরিশাল আবার কখনও পটুয়াখালী জেলার সাথে সংযুক্ত ছিলো।

১৮৮৭ সালে তৎকালীন বরিশালের ম্যাজিস্ট্রেট জে.এইচ ফ্যাশন সাহেব এই বিচ্ছিন্ন চরগুলোর প্রতি নজর দেন এবং এলাকার প্রাণকেন্দ্রে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।ফ্যাশন সাহেবের নামানুসারে বাজারটির নাম চরফ্যাশন বাজার রাখা হয়।
সেখান থেকেই চরফ্যাশন নামের উৎপত্তি।

১৯৬৮ সালে এটি থানা এবং ১৯৮২ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়।

১ টি পৌরসভা,২১ টি ইউনিয়ন,৫ টি,থানা নিয়ে গঠিত উপজেলাটির জনসংখ্যা ৫ লক্ষ ১৯ হাজার।
এরমধ্যে প্রায় ৯৫% মুসলিম,৪.২৫% হিন্দু ধর্মাবলম্বী।শিক্ষার হার ৬৭.৬২%।

এলাকাটি দূর্যোগপ্রবণ।১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসে অঞ্চলটিতে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

চরফ্যাশন মহিষের দই উৎপাদন ও ইলিশ মাছ আরোহনের জন্য বিখ্যাত।

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে চর কুকরিমুকরি,তারুয়া সমুদ্রসৈকত,জ্যাকব টাওয়ার,ঢালচর,চর নিজাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৭.থানচি: (১০২০.৮২ বর্গ কি.মি)

সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত আর গভীর অরণ্যে ঘেরা বান্দরবানের উপজেলা থানচি,যার আয়তন ১০২০.৮২ বর্গকিমি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্বত তাজিং ডং এই উপজেলাতেই অবস্থিত।

ধারণা করা হয় পঞ্চাশ দশক বা তার পূর্ব থেকে এই অঞ্চলের কিছু স্থানে নৌপথে চলাচল করা যাত্রীগণ বিশ্রাম করতে থামতেন।
মার্মা ভাষায় “থাইন চৈ” শব্দের অর্থ “বিশ্রামের স্থান”। ধারণা করা হয় “থাইন চৈ” থেকেই থানচি নামের উৎপত্তি।

১৯৭৬ সালে থানচি থানা গঠিত হয়,যা ১৯৮৩ সালে উপজেলাতে রুপান্তরিত হয়।বান্দরবান সদর থেকে থানচির দূরত্ব ৮৫ কিমি।

এর পূর্বে মিয়ানমারের চিন রাজ্য ও রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি,পশ্চিমে লামা ও আলীকদম উপজেলা,উত্তরে রুমা উপজেলা এবং দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য অবস্থিত।

উপজেলাটিতে ইউনিয়ন রয়েছে মাত্র ৪ টি,গ্রাম সংখ্যা ১৭৮ টি।
আয়তনে অনেক বড় হলেও থানচির জনসংখ্যা মাত্র ৯০ লক্ষ,যাদের মধ্যে উপজাতিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এদের মধ্যে বৌদ্ধ ৪৩.২৫%,খ্রিস্টান ২৪.৪৮%,মুসলিম ৭.৬৫%,হিন্দু ২.২৬%।শিক্ষার হার ৫০.৬৮%।

মার্মা,চাকমা,খৈয়াং,ত্রিপুরা,খুমী,খিও,ম্রো,বমসহ অসংখ্য উপজাতি এখানে বাস করে।এদের মধ্যে মার্মা দের সংখ্যাই বেশী।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভুমি এই উপজেলাতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
এদের মধ্যে তাজিং ডং,সাকা হাফং পর্বত,ডিম পাহাড়,আন্ধার মানিক,রাজাপাথর,নাফাখুম জলপ্রপাত,আমিয়াখুম জলপ্রপাত,বাকলাই জলপ্রপাত,তমাতুঙ্গী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৮.দাকোপঃ (৯৯১.৯৮ বর্গ কি.মি)

সুন্দরবনের তীরবর্তী উপজেলা দাকোপের আয়তন ৯৯১.৯৮ বর্গকিমি।আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা র মধ্যে এটি অষ্টম।

প্রশাসনিকভাবে এটি খুলনা জেলার অন্তর্গত।জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৬ কিমি।

এর পূর্বে বাগেরহাটের রামপাল ও মোংলা উপজেলা,পশ্চিমে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা,উত্তরে বাটিয়াঘাটা এবং দক্ষিণে সুন্দরবন অবস্থিত।

পূর্বে অঞ্চলটি ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ ছিলো।এরপর দা দিয়ে কুপিয়ে এসব জঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন হয়।তখন থেকে এলাকটি দাকুপী নামে পরিচিত হয়।পরবর্তীতে দাকুপী কিছুটা বিকৃত হয়ে দাকোপ নামকরণ হয়।

দাকোপ ১৯০৬ সালে থানা এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলাতে উন্নীত হয়।

১ টি পৌরসভা,৯ টি ইউনিয়ন এবং ১০৬ টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত উপজেলাটির জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৬০ হাজার।এদের মধ্যে মুসলিম ৪১.৮০%,হিন্দু ৫৬.৩৫%,খ্রিস্টান ১.৭৪%। শিক্ষার হার ৭৮.০৪%।

দেশের ২য় সমুদ্রবন্দর চালনা এই উপজেলাতেই অবস্থিত ছিলো,কিন্তু নাব্যতার অভাবে পরবর্তীতে তা মোংলা উপজেলাতে স্থানান্তরিত করা হয়।তবে এখনও একটা নদীবন্দর রয়েছে এখানে।

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সুন্দরবন,কালাবগী ইকো-ট্যুরিজম,শেখেরটেক ইকো-ট্যুরিজম,কৈলাশগঞ্জের শতবর্ষী কাছারি,গাজী ভিস হ্যাচারি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৯.গলাচিপাঃ (৯২৪.৬৮ বর্গ কি.মি)

পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত বাংলাদেশের উপকূলীয় একটি উপজেলা গলাচিপা।

এর আয়তন ৯২৪.৬৮ বর্গকিমি।আয়তনে এটি দেশের ৯ম বৃহত্তম উপজেলা।জেলাসদর থেকে এর সদস্য দূরত্ব ৩২ কিমি।

এর পূর্বে কলাপাড়া ও বরগুনার আমতলী,পশ্চিমে ভোলার চরফ্যাশন,উত্তরে পটুয়াখালী সদর,দশমিনা,বাউফল উপজেলা এবং দক্ষিণে রাঙ্গাবালী উপজেলা অবস্থিত।

গলাচিপা থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৩ সালে,আর উপজেলাতে উন্নীত হয় ১৯৮৩ সালে।পূর্বে এটি থেকে বিতাড়িত হওয়া কিছু রাখাইন পরিবার সর্বপ্রথম এখানে বসবাস করতে শুরু করে।ধীরে ধীরে জনবসতি গড়ে ওঠে।

১ টি পৌরসভা,১২ টি ইউনিয়ন ও ২৩৬ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত গলাচিপার জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ।এর মধ্যে মুসলিম ৯১.৭৮%,হিন্দু ৮.২০%।
গলাচিপাতে রাখাইন উপজাতির বাস রয়েছে।
এখানে একটি নদীবন্দরও রয়েছে।

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ১ গম্বুজ গুরিন্দা মসজিদ,তালুকদারবাড়ি মসজিদ,সুতাবাড়িয়া দয়াময়ী মন্দির,কাছারিবাড়ি মন্দির,সোনার চর,রাবনাবাদ চ্যানেল,কমলা রাণীর রাজধানী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

১০.আলীকদমঃ (৮৮৫.৭৮ বর্গ কি.মি)

আলীকদম উপজেলা ঘন বনাঞ্চল,সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত,উপত্যকা,গিরিপথ দিয়ে সজ্জিত বান্দরবানের একটি উপজেলা।

আয়তনরে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা র মধ্যে এটি দশম।আয়তন ৮৮৫.৭৮ বর্গকিমি।জেলা সদর থেকে দূরত্ব ১১১ কিমি।

আলীকদম ১৯৭৬ সালে থানা এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলাতে উন্নীত হয়।

এর পূর্বে থানচি উপজেলা,পশ্চিমে নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলা,উত্তরে লামা এবং দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য অবস্থিত।

ধারনা করা হয় আরাকানী ভাষা “আলেহক্যডং” থেকে আলীকদম নামের উৎপত্তি যার অর্থ পাহাড় ও নদীর মধ্যবর্তী স্থান।

একটা সময় অঞ্চলটি আরাকান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।১৫ শ শতাব্দীতে বাংলার সুলতান জালালুদ্দিন এলাকাটির আংশিক নিয়ন্ত্রণ পায়।১৭৫৬ সালে মুঘলরা আলীকদম জয় করে এবং আরাকানীদের বিতাড়িত করে দেয়।

আলীকদম একটি কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।এর জনসংখ্যা মাত্র ৬৪ হাজার।

এরমধ্যে মুসলিম ৫৮.৮১%,বৌদ্ধ ৩০.৯৬%,হিন্দু ৫.৯৩%,খ্রিস্টান ৫.৯৩%।শিক্ষার হার ৫৭.১৪%।

অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আলীর সুড়ঙ্গ,দামতুয়া ঝর্ণা,রূপমুহুরী ঝর্ণা,মারাইংতং পাহাড়,তামাংঝিরি জলপ্রপাত,চাইম্প্রা ঝর্ণা,রংরং পাহাড় উল্লেখযোগ্য।

তথ্যসূত্র:
১.https://bangladesh.gov.bd
২.https://bn.banglapedia.org
৩.https://www.wikipedia.org
৪.https://www.thedailystar.net/tags/hatiya-island
৫.https://www.dailyjanakantha.ws/news/710114
৬.https://www.researchgate.net/publication/358900239_Post-disaster_recovery_in_the_cyclone_Aila_affected_coastline_of_Bangladesh_women’s_role_challenges_and_opportunities_Content_courtesy_of_Springer_Nature_terms_of_use_apply_Rights_reserved#pf6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top