কোন দেশের কাছে কতটি সাবমেরিন আছে?

সাবমেরিন হলো এক বিশেষ জলযান যা পানির উপরে বা নিচে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে।
যেকোনো নৌবাহিনীর জন্যই সাবমেরিন একটি বড় সম্পদ।সামরিক সক্ষমতার দিক দিয়ে একটি সাবমেরিনকে দশটি যুদ্ধজাহাজের সমান হিসেবে গণ্য করা হয়।কেননা,এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের উপকূলের একদম কাছে চলে যাওয়া যায়,মিসাইল হামলা করা যায়,আবার মাইনও বসানো যায়।যুদ্ধজাহাজের পক্ষে সমুদ্রে সাবমেরিনকে শনাক্ত করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বিষয়।
গ্রোবাল ফায়ারপাওয়ার র্যাংকিং-২০২৪ অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ৪৩ টি দেশের কাছে সর্বমোট ৪৭৮ টি সাবমেরিন রয়েছে।এরমধ্যে ৬ টি দেশের কাছে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রয়েছে।
চলুন আজ জেনে নেই সাবমেরিন বিষয়ক সকল আদ্যপান্ত আর কোন দেশের কতটি সাবমেরিন

সাবমেরিনের ইতিহাসঃ

সমুদ্র নিরাপত্তায় সাবমেরিন ব্যবহারের ইতিহাস অনেক দীর্ঘদিনের।
প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে ১৬২০ সালে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের অধীনে নৌবাহিনীতে কর্মরত কর্ণেলিয়াস ড্রেবেল নামক এক ডাচ নাগরিক সর্বপ্রথম সাবমেরিন আবিষ্কার করেন।
তবে ১৯ শতকের দিকে এসে এটি সামরিক কাজে ব্যবহার শুরু হয়।১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবমেরিনের ব্যবহার ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

সাবমেরিন কিভাবে কাজ করে?

এটি মূলত কাজ করে প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের প্লবতার সূত্রানুযায়ী “ব্যালাস্ট ট্যাংক” থিওরি মেনে।

একটা বোতলের ভেতর যখন বাতাস থাকে,তখন সেটি পানিতে ভাসবে।
আবার যখন সেটাতে পানি ভরা হয় তখন তা ডুবে যায়।

তাই,পানিভর্তি বোতলের ভেতর যদি কোনো সিস্টেমের মাধ্যমে পানি অপসারণ করে বাতাস ঢোকানো যায় তাহলে তা ভেসে থাকবে।
পানিতে ডুব দেওয়ার জন্য সাবমেরিনে কতগুলো “ব্লাস্ট ট্যাংক” থাকে।ট্যাংকের বাল্ব খুলে তাতে সমুদ্রের পানি প্রবেশ করানো হয়।
ফরে পানি ঢুকে সেটি ক্রমশ ভারী হয়ে পানিতে নিমজ্জিত হতে পারে।

আবার উপরে ওঠার দরকার হলে এর ভেতরে থাকা কম্প্রেসড এয়ারের মাধ্যমে পানিকে বের করে দেওয়া হয়।ফলে হালকা হয়ে তা পানির উপরে আসতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে চাপের কোনো পরিবর্তন হয়না।কেননা,সাবমেরিনে উন্নতমানের স্টিল বা টাইটানিয়াম ধাতু ব্যবহৃত হয়।আর পেছনে প্রোপেলার থাকায় সামনে এগিয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের নির্বিষ বা অবিষধর সাপ কোনগুলো?

অক্সিজেন সরবারহ কিভাবে চালু রাখা হয়ঃ

মূলত সাবমেরিনের ভেতরে অক্সিজেন যোগান দেয় অক্সিজেন জেনারেটর।এটি ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
আর কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে সোডা লাইম হিসেবে কেমিকেলে প্রশমিত করে বের করে দেওয়া হয়।
আর বিশুদ্ধ পানি সরবারহ করা হয় বাষ্পীভবনের মাধ্যমে।

যেসব দেশের কাছে সাবমেরিন রয়েছেঃ

সামরিক শক্তি সম্পর্কিত সবচেয়ে বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-২০২৪ এর র্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের সর্বমোট ৪৩ টি দেশের কাছে মোট ৪৭৮ টি সাবমেরিন রয়েছে।

কোন দেশের কতটি সাবমেরিন আছেঃ

  • রাশিয়া-৬৫ টি
  • যুক্তরাষ্ট্র-৬৪ টি
  • চীন-৬১ টি
  • উত্তর কোরিয়া-৩৫ টি
  • জাপান-২৩ টি
  • দক্ষিণ কোরিয়া-২২ টি
  • ইরান-১৯ টি
  • ভারত-১৮ টি
  • তুরস্ক-১২ টি
  • গ্রীস-১১ টি
  • যুক্তরাজ্য-১০ টি
  • ফ্রান্স-৯ টি
  • মিশর-৮ টি
  • ইতালি-৮ টি
  • পাকিস্তান-৮ টি
  • সিঙ্গাপুর-৭ টি
  • আলজেরিয়া-৬ টি
  • অস্ট্রেলিয়া-৬ টি
  • জার্মানি-৬ টি
  • নরওয়ে-৬ টি
  • ভিয়েতনাম-৬ টি
  • ইসরায়েল-৫ টি
  • সুইডেন-৫ টি
  • আজারবাইজান-৪ টি
  • ব্রাজিল-৪ টি
  • কানাডা-৪ টি
  • চিলি-৪ টি
  • কলম্বিয়া-৪ টি
  • ইন্দোনেশিয়া-৪ টি
  • পেরু-৪ টি
  • তাইওয়ান-৩ টি
  • মায়ানমার-৩ টি
  • নেদারল্যান্ড-৩ টি
  • দক্ষিণ আফ্রিকা-৩ টি
  • স্পেন-৩ টি
  • আর্জেন্টিনা-২ টি
  • বাংলাদেশ-২ টি
  • ইকুয়েডর-২ টি
  • মালয়েশিয়া-২ টি
  • পর্তুগাল-২ টি
  • ভেনিজুয়েলা-২ টি
  • পোল্যান্ড-১ টি
  • কিউবা-১ টি

সাবমেরিনের যুগে বাংলাদেশঃ

২০১৬ সালের ১৪ই নভেম্বর বাংলাদেশ চীনের থেকে দুটি মিং-ক্লাস সেকেন্ড হ্যান্ড সাবমেরিন ক্রয় করে।এগুলো বানৌজা নবযাত্রা এবং বানৌজা জয়যাত্রা হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হয়।
আমাদের প্রাপ্ত ২ টি সাবমেরিনই যথেষ্ট আধুনিক।
এগুলোর দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার,প্রস্থ ৭.৬ মিটার,যা ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন।

আরও পড়ুনঃ আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা!!

পারমাণবিক সাবমেরিন সক্ষমতার দেশগুলোঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী সাবমেরিন হলো পারমাণবিক সাবমেরিন।এটি নিউক্লিয় ফিশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে চলাচল করে।একবার জ্বালানি দিলে ২০-২৫ বছর পর্যন্তও চলতে পারে।বর্তমানে ৬ টি দেশের কাছে পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে।দেশগুলো হল:যুক্তরাষ্ট্র, চীন,রাশিয়া,যুক্তরাজ্য,ফ্রান্স,ভারত।
এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আছে ৬৪ টি,চীনের ৬ টি,রাশিয়ার ৩১ টি,যুক্তরাজ্যের ১০ টি,ফ্রান্সের ৯ টি এবং ভারতের কাছে আছে ১ টি পারমাণবিক সাবমেরিন।

অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক সাবমেরিন সক্ষমতার দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তেঃ

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ৭ম দেশ হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন পেতে যাচ্ছে।
AUKUS(অস্ট্রেলিয়া,যুক্তরাজ্য,যুক্তরাষ্ট্র) চুক্তির মাধ্যমে তারা ৮ টি অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পাবে।যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ টি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পাবে।

এই চুক্তি অনুসারে চীনকে মোকাবিলায় ব্রিটিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সাবমেরিন ঘাটি অস্ট্রেলিয়ায় স্থাপন করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং তাদেরকে আধুনিক নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের প্রযুক্তিও হস্তান্তরের কথা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top