আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?

আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন

আঙ্গুল ফোটানো আমাদের অনেক পরিচিত একটা অভ্যাস।শুধু হাত বা পায়ের আঙ্গুলই না।অনেক সময় ঘাড় ফুটাতেও দেখা যায়।এছাড়া বিভিন্ন কাজকর্মের সময়,চলাফেরা করার সময়,ব্যায়াম কিংবা নামাজের সময় প্রায়শই দেখা যায়,অনিচ্ছাকৃতভাবেই আমাদের কনুই,হাঁটু,গোড়ালিসহ শরীরের বিভিন্ন সংযোগস্থল শব্দ করে ফুটে ওঠে।

এতে স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধরে নেই যে,একটা হাড়ের সাথে আরেকটা হাড়ের ঘষা লাগার ফলেই এ ধরনের শব্দ হয়।কিন্তু বিষয়টা কি তাই?

:মোটেও নয়।

চলুন আজ জেনে নেই আঙ্গুল ফোটালে ব্দ হয়!!

আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?

আঙ্গুল ফোটানো নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য দুইটি মতবাদ আছে।

প্রথম মতবাদঃ

আমাদের হাড়ের জয়েন্টগুলোতে অনেকটা গাড়ির মবিলের মতো পিচ্ছিল তরল পদার্থ থাকে।এই তরলকে ‘সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বলে’।এই তরলের কারণেই আমরা আঙ্গুলসহ সব ধরনের জয়েন্ট নাড়ানোর সময় কোনো প্রকার ব্যথা অনুভব করিনা।’

হাড়ের জয়েন্টে ‘সাইনোভিয়াল ফ্লুইড’৮

‘সাইনোভিয়াল ফ্লুইডে’ জলীয় পদার্থের সাথে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ দ্রবিভূত থাকে।আঙ্গুল ভাঁজ করা বা ফোটানোর সময় দুই হাড়ের মাঝে একটা ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়।ফলে পিচ্ছিল পদার্থের ঘনত্ব কমে যায়।যার কারণে তরলে দ্রবিভূত গ্যাসের বড় বড় বাবল/বুদবুদ সৃষ্টি হয়।সেই বুদবুদগুলে বেলুনের মতো ফুলে আবার ফেঁটে যায়।সেই বুদবুদগুলোর ফাঁটার শব্দই আমরা আঙ্গুল ফোটানের শব্দ হিসেবে শুনতে পাই।

দ্বিতীয় মতবাদঃ

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার রথম্যান ইন্সটিটিউটের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা.পেট্রো বেরোজিকলিয়ান প্রথম মতবাদটি ভূল বলে দাবি করেন।

তার মতে,যখন আপনি আঙ্গুল ফোটান বা টানেন তখন দুই হাড়ের মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গা তৈরি হওয়ায় সেখানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।ফলে সেখানে ‘সাইনোভিয়াল ফ্লুইড’ দ্রুতগতিতে প্রবেশ করে।হঠাৎ করে এতো দ্রুতগতিতে তরল ঢোকার কারণেই আঙ্গুল ফোটানোর মতো শব্দের সৃষ্টি হয়।

এরপর দ্রুত ছুটে আসা তরলগুলো আবার ধীরে ধীরে চারপাশে মিশে যায় এবং হাড়গুলো পুণরায় তাদের বন্ধনীতে মিলিত হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ আকাশ নীল দেখায় কেন?

আঙ্গুল ফোটানো কি ক্ষতিকর?

উত্তর হলোঃ না।

আঙ্গুল ফোটানো বা টানাটানির সাথে হাতের ক্ষতি বা হাড়ক্ষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

গবেষকদের দাবি,আঙ্গুল ফোটানোর অভ্যাস প্রাচীনকালের মানুষদের মধ্যেও ছিলো।বর্তমানেও এটি এটি সাধারণ ও বহুল প্রচলিত অভ্যাস।আঙ্গুল ফোটানো যদি ক্ষতিকরই হতো,তবে তাহলে এর জন্য অনেকেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হতো।এ সম্পর্কিত অনেক রিপোর্টই পাওয়া যেতো।কিন্তু এমন ঘটনা এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে দেখা যায়নি।

এতেও বিশ্বাস না হলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসক ডা. ডোনাল্ড আনগারের এক্সপেরিমেন্ট থেকে আশ্বস্ত হতে পারবেন।ডা.আনগার ৬০ বছর ধরে প্রতিদিন নিজের বামহাতের আঙ্গুল ফুটিয়েছেন।কিন্তু ডানহাতের আঙ্গুল ফুটাননি।এরপর ৬০ বছর পর তিনি এক্স-রে,এমআরআই করে দুইহাতের আঙ্গুলের মধ্যে কোনো পার্থক্যই পাননি।এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য ২০০৯ সালে তিনি “আইজি নোবেল” পুরস্কার পান।

একবার আঙ্গুল ফোটানোর সাথে সাথে আরেকবার ফোটানো যায়না কেন?

একবার আঙ্গুল ফোটানোর পর কিছু সময় পর্যন্ত পুণরায় আর আঙ্গুল ফোটানো যায়না।কারণ আঙ্গুলের হাড়গুলো তার বন্ধনীতে মিলিত হবার ক্ষেত্রে তরল পদার্থের চেয়ে একটু বেশীই সময় নিয়ে থাকে।ফলে একবার আঙ্গুল ফোটানোর ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে আবারও আঙ্গুল ফোটানো যায়না।

অতিরিক্ত আঙ্গুল ফোটানোর অসুবিধাঃ

আঙ্গুল ফোটানো একটি মন্দ অভ্যাস।এর ফলে শরীরের তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও অনেক সময় অতিরিক্ত চাপের ফলে হাড়ের স্থানচ্যুতি ঘটে।হাত-পায়ের আঙ্গুল ফোটানোতে কোনো অসুবিধা না হলেও আমাদের ঘাড় ফোটানো পরিহার করা উচিত।কারণ এতে ঘাড়ে স্থায়ী ব্যাথা,ঘাড়ের রগে সমস্যা এমনকি রগ ছিড়ে মৃত্যুও হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ
১.https://www.medicalnewstoday.com/articles/259603#causes-of-the-sounds
২.https://www.insider.com/popping-cracking-knuckles-arthritis-bad-2018-6
৩.https://www.healthline.com/health/cracking-knuckles#when-to-see-a-doctor
৪.https://www.webmd.com/osteoarthritis/joint-cracking-osteoarthritis#:~:text=Knuckle%20%22cracking%22%20has%20not%20been,.%22%20This%20is%20not%20harmful.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top