দিনের বেলার সূর্যের উত্তাপ যখন কিছুটা স্তিমিত হয় তখন মাথার উপরের বিস্তীর্ণ নীল আকাশ দেখতে কার না ভালো লাগে!! বিশাল এই নীল আকাশ অন্তরে এক অন্যরকম প্রশান্তি বয়ে আনে।মনে হয় ডানা মেলে হারিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এই নীলিমায়।কিন্তু প্রকৃতিতে এতো রঙ থাকতে আকাশ নীল দেখায় কেন ?
মনে এমন প্রশ্ন এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে।
তাহলে চলুন আজ জেনে নেই আকাশ নীল দেখায় কেন ?
আকাশ নীল কেন হয়
আকাশ মূলত বায়ুমন্ডলেরই অংশ,যা তৈরী গ্যাস ও জলীয় বাষ্প দিয়ে।পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে এটি পৃথিবীর চারপাশ ঘিরে রয়েছে।
এই বাযুমন্ডলে রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষু্দ্র ভাসমান ধূলিকণা।সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসার সময় ঐ আলো কণাগুলো দ্বারা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়।
এরমধ্যে নীল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হওয়ায় এটি সবচেয়ে বেশী বিচ্ছুরিত হয়।এজন্য আমরা আকাশকে নীল দেখি।
বিষয়টা কি একটু কঠিন লাগছে?
আচ্ছা,আসুন আরও অনেক সহজ করে দেই।
সূর্যের আলোর গঠনঃ
এরজন্য সবার আগে জানতে হবে সূর্যের আলোর রঙ কি?সবাই তো সহজেই উত্তর দেবে সাদা।কিন্তু না।
বহুবছর আগে স্যার আইজ্যাক নিউটন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে গেছেন।
তিনি প্রিজমের মধ্যে সূর্যের আলো প্রবেশ করিয়ে দেখিয়েছেন যে,আমরা যে সূর্যের সাদা আলো দেখতে পাই মূলত সাতটি আলোর রঙের সমন্বয়ে গঠিত।রঙগুলো হলোঃ বেগুনি,নীল,আসমানী,সবুজ,হলুদ,কমলা,লাল।
প্রত্যেকটি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য আবার আলাদা।বেগুনী আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম,আর লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশী।
বেইলির বিচ্ছুরণ নীতি অনুসারে,কোনো আলোর বিচ্ছুরণ তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যাস্তানুপাতিক।অর্থাৎ যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশী,সেই আলো কম বিচ্ছুরিত হবে।আর যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম,সে আলো বেশী বিচ্ছুরিত হবে।
আকাশ তাহলে বেগুনী হয়না কেন?
বেইলির বিচ্ছুরণ নীতি ব্যাখ্যা করলে বেগুনী আলোর বিচ্ছুরণ সবচেয়ে বেশী হওয়ার কথা।অর্থাৎ,আকাশ বেগুনী দেখানোর কথা।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আকাশ কখনও বেগুনী হয়না।
এর পেছনেও দুইটি ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।
প্রথমত,বায়ুমন্ডলে সব আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ ক্ষমতা তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী সমান না।
তাছাড়া বায়ুমন্ডল পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে এতো উপরে অবস্থিত যে,বিচ্ছুরিত বেগুনী আলো পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌছাতে এর বেশীরভাগ অংশই শোষিত হয়ে যায়।ফলে আকাশ নীল দেখায়।
দ্বিতীয়ত,মানুষের চোখের রেটিনায় রড ও কোণ নামের দুইধরণের কোষ থাকে।
এরমধ্যে কোণ কোষ বিভিন্ন রঙিন আলো প্রদর্শনে সহায়তা করে।অন্যান্য রঙের তুলনায় এই কোষ লাল,নীল ও সবুজ আলোতে বেশী সংবেদনশীলতা দেখায়।
এ কোষগুলো অতিবেগুনী রশ্মি থেকে নীল রশ্মিতে বেশী সংবেদনশীলতা দেখানোয় আকাশকে বেগুনী মনে হয়না।আকাশকে দেখায় গাঢ় নীল।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের নির্বিষ বা বিষধর সাপ কোনগুলো?
মেঘের রঙ সাদা কেন?
ঠিক একই কারণে মেঘের রঙ সাদা দেখায়।কারণ মেঘের অণুগুলো বেশ বড়।এরফলে এর মধ্য দিয়ে নীল ছাড়াও অন্যান্য আলোও বিক্ষিপ্ত হয়।ফলে মোটামোটি সাদা রঙ দেখায়।
আকাশ লাল দেখায় কেন?
একই ভাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশ লাল দেখায়।এসময় সূর্য দিগন্তরেখায় অবস্থান করে।
ফলে সূর্যরশ্মি পৃথিবীতে ঢোকার জন্য পুরু বায়ুস্তর ভেদ করতে হয়।ফলে অন্যান্য আলো পৃথিবীতে আসার আগে বায়ুমন্ডল দ্বারা শোষিত হয়।
লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশী হওয়ায় কম শোষিত হয়।ফলে আকাশ লাল দেখায়।
তথ্যসূত্রঃ
১.https://spaceplace.nasa.gov/blue-sky/en/
২.https://scijinks.gov/blue-sky/
৩.https://www.rmg.co.uk/stories/topics/why-sky-blue