দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন পদ্মাসেতু।পানিপ্রবাহের দিক দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান।তাই প্রমত্তা এই নদীতে সেতু নির্মাণ করা শুধু চ্যালেঞ্জিংই না,দুঃসাধ্যও বটে।সেই দুঃসাধ্যকে সাধ্য করে তুলেছে ইঞ্জিনিয়াররা।
পদ্মাসেতু বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে করা সবচেয়ে বড় প্রকল্প।নির্মাণ শুরু হওয়ার আগ থেকে নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অনেক বাধা-বিপত্তি সামলে আজ সেতুটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু সম্পর্কিত সকল তথ্য
✅প্রকল্পের নামঃ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প
✅বাহকঃ যানবাহন,ট্রেন
✅আরও পরিবহণ করবেঃ বিদ্যুৎ,গ্যাস ও অপটিক ফাইবার
✅ঠিকাদারঃ চায়না মেজর ব্রিজ
ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন
✅রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বঃ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
✅প্রকল্প তদারকিতেঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কোরিয়া এক্সপ্রেস কর্পোরেশন
✅প্রকল্প পরিচালকঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম
✅সর্বমোট ব্যয়ঃ ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা
✅জনবলঃ প্রায় ৪০০০ জন
✅প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়ঃ ১৯৯৯ সালে
✅চুড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়ঃ ২০০৫ সালে জাইকার সহায়তায়
✅প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়ঃ ৪ জুলাই ২০০১ সালে,মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়।
✅ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেনঃ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
✅মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পদ্মাসেতু তৈরির পরামর্শ দেয়ঃ জাইকা
✅মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকার,২০০৭ সালের ১০ আগষ্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়।তখন শুধু সড়কপথ ছিলো।পরে আওয়ামী লীগ সরকার এতে রেলপথ যুক্ত করে।
✅একনেকে পাস হয়ঃ ২০০৭ সালে
✅নকশা প্রণয়ন করা হয়ঃ ২ ফেব্রুয়ারি,২০০৯ সালে
✅নকশা প্রণয়ন করেঃ AECOM (USA)
✅প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয়ঃ ২০০৯ সালে
✅রেল সংযুক্তির সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়ঃ ১১ জানুয়ারি,২০১১ সালে
✅রেল,সংযোগ একনেকে অনুমোদন পায়ঃ ৩ মে,২০১৬ সালে।
✅বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি হয়ঃ ২৮ এপ্রিল ২০১১ সালে,১২০ কোটি টাকার
✅দূর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করেঃ ৩০ জুন ২০১২ সালে।
✅নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়ঃ ৯ জুলাই,২০১২ সালে
✅চুড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়ঃ ২০১৩ সালের জুন মাসে।
✅নির্মাণকাজ শুরু হয়ঃ ১২ ডিসেম্বর,২০১৫ সালে
✅উদ্ভোধন হবেঃ ৩০ জুন ২০২২ সালে
✅সেতুটি করতে সরকার সেতু বিভাগকে ১% সুদের হারে ২৯৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে,যা ৩৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ৪৭ এর দেশভাগঃ বাংলাভাগ হলো যেভাবে।।
✅সেতুর দৈর্ঘ্যঃ ৬.১৫ কিমি (২০১২৮ ফুট)
✅সেতুর প্রস্থঃ ২৮.১০ মিটার (৫৯.৪ ফুট)
✅অবস্থানঃ মাওয়া(মুন্সিগঞ্জ),শিবচর(মাদারীপুর),জাজিরা(শরীয়তপুর)।
✅সংযুক্ত হয়েছেঃ মাওয়া (মুন্সিগঞ্জ)+জাজিরা (শরীয়তপুর)
✅পিলার সংখ্যাঃ ৪২ টি(নদীতে ৪০ টি)
স্প্যান সংখ্যাঃ ৪১ টি
✅স্প্যানের ওজনঃ ৩১৪০ টন
একটি পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্বঃ ১৫০ মিটার
✅পানির স্তর থেকে উচ্চতাঃ ৬০ ফুট
✅ভায়াডাক্টঃ দুইপ্রান্তে ৩.১৮ কিমি
✅ভায়াডাক্টের পিলার সংখ্যাঃ ৮১ টি
ভায়াডাক্ট কি?
ভায়াডাক্ট হলো সেতুর স্থলভাগের অংশ,যেটা দিয়ে যানবাহন সেতুতে ওঠে।পদ্মা সেতুর সড়কের জন্য ২ পাশে ২ টি করে ৪ টি এবং রেলের জন্য ২ পাশে ১ টি করে ২ টি ভায়াডাক্ট আছে।
✅মোট পাইলিংয়ের সংখ্যাঃ ২৯৪ টি।১ নং ও ৪২ নং পিলারে ১৬ টি করে ৩২ টি,২২ টি পিলারে ৭ টি করে ১৫৪ টি,১৮ টি পিলারে ৬ টি করে ১০৮ টি পাইল বসানো হয়েছে।
✅পাইলিং গভীরতাঃ ৩৮৩ ফুট
✅পাইল বসানো সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করেঃ COWI(ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান)
✅স্থানাঙ্কঃ ২৩°২৫’২১” উত্তর,৯০°১৮’৩৫” পূর্ব
✅প্রথম স্প্যান বসানো হয়ঃ ৩০/০৯/২০১৭ তারিখে জাজিরা প্রান্তে ৩৭-৩৮ নং পিলারে
✅সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়ঃ ১০/১২/২০ তারিখে মাওয়া প্রান্তে ১২-১৩ নং পিলারে
✅সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো হয়েছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের দিনে।
✅৪১ টি স্প্যান বসাতে সময় লেগেছেঃ ৩ বছর ২ মাস ১০ দিন
✅স্প্যান বসাতে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই।
✅পাইলিং ও খুঁটির অংশে ব্যবহৃত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অতি মিহি সিমেন্ট।
✅পাইলিং এ ব্যবহৃত হয়েছে ৩৮০ টন ওজনের বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোহ্যামার।
✅পদ্মাসেতুর খুঁটি সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে বসানো হয়েছে,যা বিশ্বে প্রথম।
✅নদীশাসন করা হয়েছেঃ ১২ কিমি
✅নদীশাসনের ঠিকাদারঃ সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন।
আরও পড়তে পারেনঃ কেমন ছিলো যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি?
✅সেতুর মোট রোডওয়ে স্লাবের সংখ্যাঃ ২৯১৭ টি।
✅রোডওয়ে স্লাব বসানো শেষ হয় ২৩ শে আগষ্ট,২০২১ সালে।
✅সেতুর মোট রেলওয়ে স্লাবের সংখ্যাঃ ২৯৫৯ টি।
✅রেলওয়ে স্লাব বসানো শেষ হয় ২০শে মে,২০২১।
✅মাওয়া-জাজিরা সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্যঃ ১৪ কিমি
✅সংযোগ সড়কের ঠিকাদারঃ এএমএল-এইচসিএম
✅সর্বমোট জমি অধিগ্রহণঃ ৯১৮ হেক্টর
✅পুণর্বাসনের জন্য বদলীমূল্য প্রদানঃ ৫০০.৭১ কোটি টাকা
✅প্লট প্রদানঃ ২৬৯৮ টি।এরমধ্যে আবাসিক প্লট ২৬১৮ টি,বানিজ্যিক প্লট ৮০ টি।
✅পদ্মা সেতু বিশ্বের ২৫ তম বৃহত্তম সড়কসেতু।এশিয়ার ৩য় বৃহত্তম সড়কসেতু।
✅সেতুটির ভূমিকম্প সহনশীলতা মাত্রাঃ ৯ রিখটার স্কেল
✅পদ্মা সেতু ঢাকার সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলাকে সংযুক্ত করেছে
✅সেতুটি সম্পন্ন হলে দেশের মোট জিডিপি বাড়বেঃ ১.২৩%
✅দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বেঃ ২.৩ শতাংশ।
এই ছিলো পদ্মাসেতু সম্পর্কিত সকল তথ্য
আগামী আর্টিকেলে দেখা হবে নতুন কোনো টপিক নিয়ে।
তথ্যসূত্রঃ
১)Padmabridge.gov.bd
২)www.wikipedia.com
৩)https://www.roadtraffic-technology.com/projects/padma-bridge/
৪)https://www.ice.org.uk/events/exhibitions/ice-bridge-engineering-exhibition/the-history-of-bridges/padma-bridge