সাগরে ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টির পর থেকেই আবহাওয়া অধিদপ্তর ঝড়ের জন্য বিভিন্ন সতর্কতা সংকেত জারি করে।ঝড়ে আক্রান্ত হতে পারে এমন বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যে এসব সংকেত স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং করে অথবা টেলিভিশন বা রেডিওর মাধ্যমে প্রচার করে থাকে। তবে ঘুর্ণিঝড়ের সতর্কতা সংকেতের অর্থ গুলো কি?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১ টি ও নদীবন্দরের জন্য ৪ টি সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়ে থাকে।
ঘুর্ণিঝড়ের সতর্কতা পতাকা উত্তোলন পদ্ধতিঃ
সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রে ১,২ ও ৩ নং সংকেতের ক্ষেত্রে সতর্ক চিহ্ন হিসেবে ১ টি লাল পতাকা,৪ ও ৬ নং এর ক্ষেত্রে ২ টি লাল পতাকা এবং ৮,৯ ও ১০ নং সংকেতের ক্ষেত্রে ৩ টি লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সমুদ্রবন্দরের জন্য সতর্কতা সংকেতঃ
বন্দরের জন্য সর্বমোট ১১ টি সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়। ঘুর্ণিঝড়ের সতর্কতা সংকেতের অর্থ কি চলুন জেনে নেই।
১নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেতঃ
সাগরের দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।ফলে সামুদ্রিক ঝড় সৃষ্টি হতে পারে।এসময় বাতাসের গতিবেগ হবে ঘন্টায় ৬১ কি.মি।
জাহাজ বন্দর ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে।
আরও পড়ুনঃযে দেশগুলোর অবস্থান একাধিক মহাদেশে।
২নং দূরবর্তী হুশিয়ারী সংকেতঃ
দূর গভীর সমুদ্রে ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে।সেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি.মি।তবে বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবেনা।
বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ সমুদ্রে বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।
৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেতঃ
বন্দর ও নোঙ্গরকৃত জাহাজ দমকা হাওয়ার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসময় বাতাসের একটানা বেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কি.মি হবে।
৪নং স্থানীয় হুশিয়ারী সংকেতঃ
বন্দর ঘুর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে।যেখানে বাতাসের বেগ থাকবে ঘন্টায় ৫১-৬১ কি.মি।
তবে ঝড়ের চুড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।
৫ নং বিপদ সংকেতঃ
অল্প বা মাঝারি তীব্র গতির ঘুর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে।বাতাসের বেগ একটানা গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি.মি।
ঝড়টি বন্দরকে বামদিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
৬ নং বিপদ সংকেতঃ
বন্দর অল্প বা মাঝারি তীব্রতার ঘুর্নিঝড়ের কবলে পড়বে এবং আবহাওয়া দূর্যোগপূর্ণ থাকবে।এর বাতাসের একটানা গতিবেগঘহ থাকবে ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি.মি।
ঝড়টি বন্দরকে ডানদিকে রেখে অতিক্রম করবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তদসংলগ্ন এলাকায় চলাচলকারী সকল মাছ ধরার জাহাজ ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
৭নং বিপদ সংকেতঃ
বন্দর অল্প বা মাঝারি তীব্রতার ঘুর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হবে।।এজন্য আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে।বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি.মি।
ঘুর্ণিঝড়টি বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে অতিক্রম করবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তদসংলগ্ন এলাকায় চলাচলকারী সকল মাছ ধরার জাহাজ ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?
৮ নং মহাবিপদ সংকেতঃ
বন্দর প্রচন্ড বা তীব্র গতিসম্পন্ন ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে।ফলে বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে।বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ৮৯ কি.মি কিংবা তার বেশী।
ঘুর্ণিঝড়টি বন্দরকে ডানদিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তদসংলগ্ন এলাকায় চলাচলকারী সকল মাছ ধরার জাহাজ ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
৯ নং মহাবিপদ সংকেতঃ
বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে।এর প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে।বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ১১৮-১৭০ কি.মি।
ঝড়টি বন্দরকে ডানদিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তদসংলগ্ন এলাকায় চলাচলকারী সকল মাছ ধরার ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
১০ নং মহাবিপদ সংকেতঃ
বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার একটি ঘুর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হবে।ফলে বন্দরের আবহাওয়া অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ থাকবে।এখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ হবে ঘন্টায় ১৭১ কি.মি বা তার বেশী।
ঘুর্ণিঝড়টি বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে অতিক্রম করবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তদসংলগ্ন এলাকায় চলাচলকারী সকল মাছ ধরার ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
১১ নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেতঃ
আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কতৃপক্ষের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ ও চরম প্রতিকূল বলে মনে করেন।
আরও পড়ুনঃ আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি জেলা।
নৌ বন্দরের জন্য সতর্কতা সংকেতঃ
নৌবন্দরের জন্য মোট ৪ টি সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়।নৌবন্দরের জন্য ঘুর্ণিঝড়ের সতর্কতা সংকেতের অর্থ গুলো চলুন জেনে নেই।
১নং নৌ সতর্কতা সংকেতঃ
বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।বন্দরের উপর দিয়ে ঘন্টায় ৬০ কি.মি বেগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে।সাথে এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।
২নং নৌ হুশিয়ারী সংকেতঃ
বন্দর এলাকা নিম্নচাপের সমান তীব্রতার একটি কালবৈশাখী ঝড়ের সম্মুখীন হতে পারে।যার বাতাসের বেগ হবে ঘন্টায় ৬১ কিমি বা তদূর্ধ্ব।
নৌযান দূর্যোগের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ৪৭ এর দেশভাগঃ বাংলা ভাগ হলো যেভাবে।।
৩নং নৌ বিপদ সংকেতঃ
নৌবন্দর এলাকা সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত।ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি.মি বেগের ঝড় খুব দ্রুতই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে।
সব নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে।
৪ নং নৌ বিপদ সংকেতঃ
নৌবন্দর এলাকা প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার একটি সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত।শীঘ্রই তা বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে,যার গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ৮৯ কি.মি বা তদূর্ধ্ব।
সব নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র
১.https://live8.bmd.gov.bd/
২.https://pressinform.portal.gov.bd/sites/default/files/files/pressinform.portal.gov.bd/page/50aa82ee_7a92_4aa7_817b_bb323c098833/2024-02-07-06-39-a068037697f3f8a69c813f5a63d78ba6.pdf
৩.http://www.cpp.gov.bd/
৪.https://www.rmp.gov.bd/news/2209