আয়তনে ভারতের সবচেয়ে বড় দশটি রাজ্য।।

ভারতের বড় জেলা ভারতের মানচিত্র

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।আয়তনে দেশটি বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম রাষ্ট্র যার আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গ কি.মি।জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের প্রথম, যার জনসংখ্যা প্রায় ১৪২ কোটি।ভারত বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যার জিডিপির আকার প্রায় ৪.২৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।দেশটি ২৮ টি রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত।চলুন আজ জেনে নেই আয়তনে ভারতের বড় রাজ্য গুলোর মধ্যে প্রথম দশটি নিয়ে বিস্তারিত সব তথ্য।

১.রাজস্থানঃ (৩,৪২,২৩৯ বর্গ কি.মি)

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজস্থান আয়তনে ভারতের বড় রাজ্য,যার আয়তন ৩,৪২,২৩৯ বর্গ কি.মি।এটি ভারতের মোট আয়তনের শতকরা ১০.৪২%।0

রাজ্যটিতে প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ বাস করে,যা জনসংখ্যার দিক দিয়ে দেশের চতুর্থ জনবহুল রাজ্য।এর জনসংখ্যা প্রায় জার্মানির জনসংখ্যার সমান।বেশীরভাগ মানুষ রাজস্থানী ভাষায় কথা বলে

রাজস্থানের উত্তরে পাঞ্জব রাজ্য,উত্তর-পূর্বে হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ,দক্ষিণ-পূর্বে মধ্যপ্রদেশ,দক্ষিণ-পশ্চিমে গুজরাট,পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশ অবস্থিত।

১৯৪৯ সালে গঠিত রাজ্যটিতে বিভাগ রয়েছে ৭ টি,জেলার সংখ্যা ৪১ টি।রাজধানী জয়পুর।সবচেয়ে বড় শহর যোধপুর।

ভারতের থর মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় এর বেশীরভাগ এলাকাই শুষ্ক।এর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আরাবল্লী পর্বতমালা রয়েছে।

রাজ্যটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারতের ৭ম ধনী রাজ্য,যার জিডিপি প্রায় ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রাজস্থানের অর্থনীতি মূলত পশুপালন ও কৃষিনির্ভর।এটি ভারতের সর্ববৃহৎ পশম,ভোজ্যতেল ও আফিম উৎপাদনকারী অঞ্চল।

এছাড়া খনিজ সম্পদের মধ্যে রূপা,দস্তা,সীসা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

২.মধ্যপ্রদেশঃ (৩,০৮,২৫২ বর্গ কি.মি)

ভারতের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত মধ্যপ্রদেশের আয়তন ৩,০৮,২৫২ বর্গ কি.মি,যা ভারতের মোট আয়তনের ৯.৩৮%।

রাজ্যটির জনসংখ্যা ৮ কোটি ৯০ লক্ষ,যা প্রায় তুরস্কের জনসংখ্যার সমান।এটি ভারতের ৫ম জনবহুল রাজ্য।বেশিরভাগ মানুষ হিন্দি ভাষায় কথা বলে।

মধ্যপ্রদেশের পূর্বে ছত্রিশগড় রাজ্য,উত্তর-পূর্বে উত্তর প্রদেশ,পশ্চিমে গুজরাট,উত্তর-পশ্চিমে রাজস্থান,দক্ষিণে মহারাষ্ট্র রাজ্য অবস্থিত।

১৯৫০ সালে গঠিত রাজ্যেটির রাজধানী ভোপাল,তবে সবচেয়ে বড় শহর ইন্দোর।রাজ্যটিতে বিভাগ রয়েছে ১০ টি,জেলা ৫৫ টি।

রাজ্যটিতে উত্তরে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি ও দক্ষিণে দক্ষিণাত্য মালভূমির সমন্বয়ে গঠিত।

বিন্ধ্যা ও সাতপুরা পর্বত রেঞ্জে অবস্থিত হওয়ায় ভৌগোলিকভাবে এখানে ছোট-বড় পাহাড়,নদী উপত্যকা রয়েছে।

মধ্যপ্রদেশ ভারতের ১০ ম ধনী রাজ্য যার জিডিপি প্রায় ১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রাজ্যটির অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল।

প্রধান খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা,পান্না,লোহা,ম্যাংগানিজ,বক্সাইট,ডলোমাইট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৩.মহারাষ্ট্রঃ (৩,০৭,৭১৩ বর্গ কি.মি)

পশ্চিম ভারতে অবস্থিত মহারাষ্ট্র আয়তনে ভারতের বড় রাজ্য গুলোর মধ্যে একটি। আয়তন ৩,০৭,৭১৩ বর্গ কি.মি,যা প্রায় ভারতের মোট আয়তনের ৯.৩৬%।

রাজ্যটির জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৯০ লক্ষ,যা মেক্সিকোর জনসংখ্যার সমান।এটি ভারতের তৃতীয় জনবহুল রাজ্য।বেশীরভাগ মানুষই মারাঠি ভাষায় কথা বলে।

মহারাষ্ট্রের পূর্বে ছত্রিশগড়,দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা,পশ্চিমে আরব সাগর,উত্তর পশ্চিমে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দেদ্রা-নগর হাভেলী এবং দামানদ-দিউ,উত্তরে গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশ,দক্ষিণে গোয়া ও কর্ণাটক রাজ্য অবস্থিত।

১৯৬০ সালে গঠিত রাজ্যটির বিভাগ সংখ্যা ৬ টি,জেলা ৩৬ টি।মুম্বাই মহারাষ্ট্রের রাজধানী শহর।এটি ভারতের অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক রাজধানীও বটে।এটি ভারতের প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে একটি।

দক্ষিণাত্য মালভূমির একটি বিশাল অংশ জুড়ে মহারাষ্ট্র অবস্থিত।এছাড়া রাজ্যটির কিছু অংশ পশ্চিমঘাট ও সাতপুরা পর্বতমালা অঞ্চলে পড়েছে।

পশ্চিমঘাট থেকে আরব সাগর পর্যন্ত অঞ্চলটি কোংকান সমভূমির অন্তর্গত।আরব সাগরের সাথে মহারাষ্ট্রের ৮৪০ কি.মি উপকূলরেখা রয়েছে।

মু্ম্বাই অর্থনৈতিকভাবে ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য যার জিডিপি প্রায় ৪৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এটি ভারতের সবচেয়ে শিল্পোন্নত রাজ্য,যার অর্থনীতি প্রায় পুরোটাই শিল্পখাতের উপর নির্ভরশীল।এটি ভারতের শিল্পোৎপাদনের ২৫% ও সফটওয়্যার রপ্তানির ২৮% এ রাজ্যের অবদান।

এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ও ভারতের প্রধান বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এখানেই অবস্থিত।বিশ্বের ২য় বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু বলিউড মহারাষ্ট্রে অবস্থিত।

৪.উত্তর প্রদেশঃ (২,৪০,৯২৮ বর্গ কি.মি)

উত্তর ভারতে অবস্থিত রাজ্যটির আয়তন ২,৪০,৯২৮ বর্গ কি.মি,যা ভারতের মোট ভূমির ৭.৩৩%।

উত্তর প্রদেশ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য যার জনসংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি ১৫ লাখ।জনসংখ্যায় এটি পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার সমান।

রাজ্যটির পূর্বে বিহার,পশ্চিমে রাজস্থান,উত্তর-পশ্চিমে হরিয়ানা,হিমাচল ও দিল্লী,উত্তরে নেপাল ও উত্তরখন্ড রাজ্য,দক্ষিণে ঝাড়খন্ড,ছত্রিশগড় ও মধ্যপ্রদেশ অবস্থিত।

১৯৫০ সালে গঠিত রাজ্যটির বিভাগ সংখ্যা ১৮ টি,জেলা ৭৫ টি।এটিই ভারতের সবচেয়ে বেশী জেলাসম্বৃদ্ধ রাজ্য।রাজধানী শহর লক্ষ্ণৌ।বেশিরভাগ মানুষ হিন্দি ভাষায় কথা বলে।তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উর্দুভাষীও রয়েছে।

হিমালয়ের কোলে অবস্থিত রাজ্যটির উত্তরাঞ্চলের বিশাল অংশ গাঙ্গেয় সমভূমি ও দক্ষিণাঞ্চলে বিন্ধ্যা পর্বতমালা ও মালভূমি অঞ্চল রয়েছে।

উত্তর প্রদেশ ভারতের ৪র্থ ধনী রাজ্য,যার জিডিপির প্রায় ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রাজ্যটির অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল।ভারতের প্রায় ৭০% চিনির যোগান দেয় রাজ্যটি।

খনিজসম্পদের মধ্যে কয়লা,ডলোমাইট,লিমোনাইট,সিলিকা,চায়না ক্লে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৫.গুজরাটঃ (১,৯৬,০২৪ বর্গ কি.মি)

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত গুজরাটের আয়তন ১,৯৬,০২৪ বর্গ কি.মি।এটি ভারতের মোট আয়তনের ৫.৯৫%।

গুটরাটের জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৩৬ লক্ষ,যা প্রায় থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার সমান।এটি জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের ৮ম জনবহুল রাজ্য।বেশিরভাগ মানুষ গুজরাটি ভাষায় কথা বলে।

গুজরাটের উত্তর-পূর্বে রাজস্থান,দক্ষিণে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দেদ্রা-নগর হাভেলি ও দামান-দিউ,দক্ষিণ-পূর্বে মহারাষ্ট্র,পূর্বে মধ্যপ্রদেশ,পশ্চিমে আরব সাগর ও পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ।

১৯৬০ সালে রাজ্যের মর্যাদা পাওয়া গুজরাটের জেলার সংখ্যা ৩৩ টি।রাজধানী শহর গান্ধীনগর হলেও প্রধান শহর আহমেদাবাদ।

গুজরাটের সাথে আরব সাগরের ১৬০০ কি.মি বিস্তৃত উপকূলরেখা রয়েছে,যা ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ উপকূল।এর পূর্ব সীমান্তে আরাবল্লী,পশ্চিমঘাট,বিন্ধ্যা ও সাতপুরা পর্বতমালা অবস্থিত।এর পশ্চিমে থর মরুভূমির একটি অংশ ও “রন অব কচ্ছ” অবস্থিত।”রন অব কচ্ছ” একটি বিখ্যাত লবনাক্ত জলাভূমি যা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত।

গুজরাট অর্থনৈতিকভাবে ভারতের ৫ম ধনী রাজ্য যার জিডিপি প্রায় ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গুজরাটের অর্থনীতির সিংহভাগ শিল্পের উপর নির্ভরশীল।শিল্পোজাত পণ্য রপ্তানিতে এটি সকল রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে।গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দর দিয়ে ভারতের প্রায় ৪০% সমুদ্রপণ্য পরিবহন করা হয়।

খনিজ সম্পদের মধ্যে ম্যাঙ্গানিজ,লিগনাইট,বক্সাইট,চুনাপাথর উল্লেখযোগ্য।গুজরাট ভারতের মোট সোডা অ্যাশের ৯৮% ও লবণের ৭৮% সরবারহ করে।

আরও পড়ুনঃ আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি জেলা।।

৬.কর্ণাটকঃ (১,৯১,৭৯১ বর্গ কি.মি)

ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য কর্ণাটকের আয়তন ১,৯১,৭৯১ বর্গ কি.মি।আয়তনে এটি ভারতের ৫.৮৪%।

জনসংখ্যা ৬ কোটি ৯০ লক্ষ।জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি প্রায় যুক্তরাজ্যের সমান এবং ভারতের ৯ম জনবহুল রাজ্য।বেশীরভাগ মানুষ কন্নড় ভাষায় কথা বলে।

কর্ণাটকের পশ্চিমে কেন্দ্রশাসিত লাক্ষাদ্বীপ ও লাক্ষাদ্বীপ সাগর,উত্তর-পশ্চিমে গোয়া,উত্তরে মহারাষ্ট্র,উত্তর-পূর্বে তেলেঙ্গানা,পূর্বে অন্ধ্রপ্রদেশ,দক্ষিণ-পূর্বে তামিলনাড়ু,দক্ষিণ-পশ্চিমে কেরালা রাজ্য অবস্থিত।

১৯৫৬ সালে মহীশূর রাজ্য নামে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৭৩ সালে নামকরণ করা হয় কর্ণাটক।এর বিভাগ রয়েছে ৪ টি,জেলা ৩১ টি।রাজধানী শহর ব্যাঙ্গালোর।

কর্ণাটক দাক্ষিণাত্য মালভূমির উপর অবস্থিত।বেশিরভাগ অঞ্চলই উচ্চভূমি।পশ্চিমঘাট আর পূর্বঘাট পর্বতমালা এ রাজ্যটিতে এসে মিলিত হয়েছে।এছাড়া লাক্ষাদ্বীপ সাগরের সাথে রাজ্যটির ৩০০ কি.মি উপকূলীয় রেখা রয়েছে।

কর্ণাটক ভারতের সবচেয়ে উদীয়মান অর্থনীতির রাজ্য।এটি জিডিপির আকারে ভারতের ৩য় ধনী রাজ্য।এর জিডিপি প্রায় ৩৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রাজ্যটির অর্থনীতি মূলত তথ্যপ্রযুক্তি ও শিল্পের উপর নির্ভরশীল।তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য একে ভারতের সিলিকন ভ্যালি বলা হয়।

খনিজ সম্পদের মধ্যে সোনা,গ্রানাইট,লোহা,বক্সাইট,চায়না ক্লে,ক্রোমিয়াম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৭.অন্ধ্র প্রদেশঃ (১,৬২,৯৭৫ বর্গ কি.মি)

ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত অন্ধ্র প্রদেশ আয়তনে ভারতের বড় রাজ্য গুলোর মধ্যে ,যার আয়তন ১,৬২,৯৭৫ বর্গ কি.মি

আয়তনে এটি ভারতের প্রায় ৪.৯৬%।

জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ।বেশিরভাগ মানুষ তেলেগু ভাষায় কথা বলে। জনসংখ্যায় এটি ভারতের ১০ ম জনবহুল রাজ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ার জনসংখ্যার সমান।

রাজ্যটির উত্তরে ছত্রিশগড় প্রদেশ,উত্তর-পূর্বে উড়িষ্যা,উত্তর-পশ্চিমে তেলেঙ্গানা,দক্ষিণে তামিলনাড়ু, দক্ষিণ-পশ্চিমে কর্ণাটক ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

অন্ধ্রের জেলা সংখ্যা ২৬ টি।১৯৫৫ সালে রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতিলাভ করে।তবে ২০১৪ সালে এটি ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন করা হয়।

পূর্বে রাজধানী হায়দ্রাবাদ থাকলেও বর্তমানে রাজধানী শহর অমরাবতী। বিশাখাপটনম রাজ্যটির প্রধান শহর ও বন্দর।

পূর্বঘাট পর্বতমালা,মালভূমি ও সমভূমির সমন্বয়ে রাজ্যটি গঠিত।রাজ্যটির পূর্বে উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্বঘাট পর্বতমালা অবস্থিত।আর পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চল রয়েছে।বঙ্গোপসাগরের সাথে রাজ্যটির ৯৭৪ কি.মি. উপকূলরেখা রয়েছে।

অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এটি ভারতের ৯ম ধনী রাজ্য যার জিডিপি প্রায় ১৮২ বিলিয়ন ডলার।রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও শিল্পের উপর নির্ভরশীল।

খনিজ সম্পদের মধ্যে অ্যাটবেস্টস,মাইকা,ম্যাঙ্গানিজ,কয়লা,লোহা,হীরা,চুনাপাথর উল্লেখযোগ্য।

পড়তে পারেনঃ পৃথিবীর যেদেশগুলো একাধিক মহাদেশে অবস্থিত!!

৮.উড়িষ্যাঃ (১,৫৫,৭০৭ বর্গ কি.মি)

পূর্ব ভারতে অবস্থিত উড়িষ্যার আয়তন ১,৫৫,৭০৭ বর্গ কি.মি।এটি ভারতের ৪.৭৪ শতাংশ এলাকা জুড়ে আবস্থিত।

রাজ্যটির জনসংখ্যা ৪ কোটি ৭০ লক্ষ,যা প্রায় ইরাকের জনসংখ্যার সমান।বেশীরভাগ মানুষ উড়িয়া ভাষায় কথা বলে।তবে রাজ্যটির উত্তর-পূর্বাংশে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীও রয়েছে।জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি ভারতের ১১ তম জনবহুল রাজ্য।

উড়িষ্যার উত্তরে ঝাড়খন্ড রাজ্য,উত্তর-পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ,পশ্চিমে ছত্রিশগড়,দক্ষিণ-পশ্চিমে অন্ধ্রপ্রদেশ ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

১৯৫০ সালে গঠিত রাজ্যটির বিভাগ সংখ্যা ৩ টি,জেলা ৩০ টি।রাজধানী শহর ভুবনেশ্বর।সবচেয়ে বড় শহর কটক।

রাজ্যটির ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য বেশ জটিল।এর তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চল পর্বত দিয়ে বেষ্টিত।রাজ্যটির পূর্বাংশে উপকূলীয় সমভূমি,মধ্যাংশে পর্বতময় অঞ্চল ও ছোট নাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ,পশ্চিমাংশে উচ্চভূমি রয়েছে।
এছাড়া বঙ্গোপসাগরের সাথে রাজ্যটির ৪৮৫ কি.মি সমুদ্রতট রয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে রাজ্যটি বেশ দূর্বল।এর জিডিপির আকার প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলার,ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে যার অবস্থান ১৫ তম।
উড়িষ্যার অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল।

তবে এলাকাটি খনিজ সম্পদে ভরপুর।ভারতের মোট কয়লা ও লোহার এক-চতুর্থাংশ,বক্সাইটের এক-তৃতীয়াংশ এই রাজ্য থেকেই সরবারহ করা হয়।এছাড়া এখানে হীরা,সোনা,টিন,নিকেল,ভেনাডিয়াম,ক্রোমাইটের মজুদও রয়েছে।

৯.ছত্রিশগড়ঃ (১,৩৫,১৯২ বর্গ কি.মি)

ভারতের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ছত্রিশগড়ের আয়তন ১,৩৫,১৯২ বর্গ কি.মি।আয়তনে এটি ভারতের ৪.১১%।

রাজ্যটির জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ১০ লক্ষ,যা প্রায় আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের জনসংখ্যার সমান।

রাজ্যটির সরকারি ভাষা হিন্দি হলেও বেশিরভাগ মানুষ ছত্রিশগড়ি ভাষায় কথা বলে।

ছত্রিশগড়ের উত্তরে উত্তর প্রদেশ,উত্তর-পশ্চিমে মধ্যপ্রদেশ,উত্তর-পূর্বে ঝাড়খন্ড,দক্ষিণে অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানা,দক্ষিণ-পশ্চিমে মহারাষ্ট্র অবস্থিত।

২০০০ সালে মধ্যপ্রদেশের একটি অংশ নিয়ে রাজ্যটি গঠিত হয়।এর বিভাগ সংখ্যা ৫ টি,জেলা ৩৩ টি।রাজধানী শহর রায়পুর।

রাজ্যটির উত্তর ও দক্ষিণাংশ পাহাড়ি অঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চল উর্বর সমভূমি।
বিন্ধ্যা,সাতপুরা পর্বতমালা ও ছোট নাগপুর মালভূমি রাজ্যটির পূর্বাংশে অবস্থিত।
ছত্রিশগড়ের ৪০ শতাংশ এলাকাই বনভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত।

ছত্রিশগড়ের জিডিপির আকার মাত্র ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,যা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে ১৮ তম অবস্থানে রয়েছে।

রাজ্যটির অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল।প্রচুর পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় বলে ছত্রিশগড়কে ভারতের “ভাতের বাটি” বলা হয়।

এছাড়া শিল্পোৎপাদনেও রাজ্যটি দ্রুত এগিয়ে চলছে।
বর্তমানে এটি ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি।

ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কয়লা মজুদ আছে রাজ্যটিতে,তবে উত্তোলনে এটি প্রথম।

দেশের মোট সিমেন্ট উৎপাদনের ৫০% হয় রাজ্যটিতে।
এছাড়া চুনাপাথর,ডলোমাইট,হীরা,কোয়ার্টজ,লোহার সন্ধানও পাওয়া গেছে।

১০.তামিলনাড়ুঃ (১,৩০,০৫৮ বর্গ কি.মি)

ভারতের সর্বদক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুর আয়তন ১,৩০,০৫৮ বর্গ কি.মি।এটি ভারতের মোট আয়তনের ৩.৯৬%

রাজ্যটির জনসংখ্যা ৭ কোটি ৭৫ লক্ষ,যা থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।এটি ভারতের সপ্তম জনবহুল রাজ্য।

১৯৫৬ সালে গঠিত রাজ্যটির বিভাগ রয়েছে ৫ টি,জেলা ৩৮ টি।রাজধানী শহর চেন্নাই।এটি ভারতের অন্যতম বড় সমুদ্রবন্দর।

তামিলনাড়ুর উত্তরে অন্ধ্রপ্রদেশ,উত্তর-পশ্চিমে কর্ণাটক,পশ্চিমে কেরালা,পূর্বে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি ও বঙ্গোপসাগর,দক্ষিণে লাক্ষাদ্বীপ সাগর,দক্ষিণ-পূর্বে পক প্রণালী,মান্নার উপসাগর ও শ্রীলঙ্কা অবস্থিত।

রাজ্যটির ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য কিছুটা বৈচিত্র্যময়।এর পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও দাক্ষিণাত্য মালভূমি,উত্তরে পূর্বঘাট পর্বতমালা,পূর্বে বিস্তীর্ণ সমভূমি,আর দক্ষিণ-পূর্বদিকে পক প্রণালী দ্বারা শ্রীলঙ্কা থেকে বিভক্ত।এর সমুদ্রতটের দৈর্ঘ্য ১০৭৬ কি.মি।

তামিলনাড়ু ভারতের দ্বিতীয় ধনী রাজ্য,যার জিডিপি প্রায় ৩৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তামিলনাড়ুর অর্থনীতি মূলত শিল্পের উপর নির্ভরশীল।রাজ্যটি ভারতের মোট মোটরগাড়ি ও অটোমোবাইল যন্ত্রাংশের ৩৫%,চামড়াজাত দ্রব্যের ৪০%,মোটর পাম্পের ৬৫% সরবারহ করে।ভারতের মোট টেক্সটাইল মিলের ৫৫% ই এ রাজ্যে অবস্থিত।

এছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ প্রাচীন ব্যাংকগুলো এ রাজ্যেই গড়ে ওঠে।ভারতের সবচেয়ে বেশি শহরে বাস করে এ রাজ্যের মানুষ।

আরও পড়ুনঃ ৪৭ এর দেশভাগঃ বাংলা ভাগ হয়েছিল যেভাবে।।

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান কোথায়?

ভারতের একসময়কার সবচেয়ে সম্বৃদ্ধশালী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গ কি.মি। আয়তনে ভারতের বড় রাজ্য গুলোর মধ্যে এর অবস্থান ১৩ তম।যা দেশটির মোট আয়তনের মাত্র ২.৭৫%।

পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।এটি ভারতের ৪র্থ জনবহুল রাজ্য।এর জনসংখ্যা ইরান,ভিয়েতনামের চেয়েও বেশি।

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের প্রতিষ্ঠাকালীন রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি।এর বিভাগ সংখ্যা ৫ টি,জেলা ২৩ টি।


আয়তনে রাজ্যটির বড় জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা (৯৯৬০ বর্গ কি.মি),ছোট জেলা কলকাতা (২০৬ বর্গ কি.মি)।

জনসংখ্যায় বড় জেলা উত্তর চব্বিশ পরগণা ও ছোট জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর।

কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহর ও প্রাচীন বন্দর।এটি ব্রিটিশ ভারতেরও রাজধানী ছিলো।

রাজ্যটির উত্তরে সিকিম রাজ্য ও ভুটান,উত্তর-পূর্বে আসাম,পূর্বে বাংলাদেশ,দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর,দক্ষিণ-পশ্চিমে উড়িষ্যা,পশ্চিমে বিহার ও ঝাড়খন্ড রাজ্য অবস্থিত।

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের তিনটি (পশ্চিমবঙ্গ,সিকিম,অরুনাচল) রাজ্যগুলোর একটি যার সাথে তিনটি স্বাধীন দেশের সীমান্ত রয়েছে।(বাংলাদেশ,ভুটান,নেপাল)।

ভৌগলিকভাবে এটি উত্তরদিকে হিমালয়ের উচ্চভূমি ও দক্ষিণ দিকে উর্বর বিস্তীর্ণ সমভূমি দ্বারা গঠিত।বঙ্গোপসাগরের সাথে রাজ্যটির ১৫৭.৫ কি.মি সমুদ্রতট রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গই ভারতের একমাত্র রাজ্য যার সাথে হিমালয় পর্বতমালা ও সমুদ্রের সরাসরি সংযোগ রয়েছে।

অর্থনীতির দিক দিয়েও রাজ্যটি বেশ সম্বৃদ্ধ।এটি ভারতের ৬ষ্ঠ ধনী রাজ্য,যার জিডিপির আকার প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তথ্যসূত্রঃ
১.https://en.wikipedia.org/wiki/Main_Page
২.https://knowindia.india.gov.in/states-uts/karnataka.php
৩.https://www.newworldencyclopedia.org/entry/Karnataka
৪.https://www.britannica.com/place/Andhra-Pradesh
৫.https://www.britannica.com/place/Odisha
৬.https://statisticstimes.com/demographics/india/indian-states-population.php
৭.https://www.forbesindia.com/article/explainers/gdp-of-indian-states-union-territories/88157/1
৮.https://chhattisgarh.nic.in/
৯.http://www.maharashtra.gov.in/
১০.https://mp.gov.in/
১১.https://wb.gov.in/
১২.https://up.gov.in/
১৩.https://www.britannica.com/place/Rajasthan

Back To Top