৪৭ এর দেশভাগঃ বাংলা ভাগ হলো যেভাবে।।

বাংলাভাগ

মূলত ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয় ধর্মের ভিত্তিতে।হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো নিয়ে ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা হয়।তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বেশীরভাগ এলাকা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার স্বাভাবিকভাবে সেগুলো পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়।ভারতের ক্ষেত্রেও বেশীরভাগ এলাকা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় সেগুলোকে ভারতের অন্তর্গত করা হয়।তবে সমস্যা বাঁধে পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশকে নিয়ে।

তৎকালীন বাংলার হিন্দু-মুসলিম পরিসংখ্যানঃ

বাংলায় হিন্দু জনসংখ্যার হার ছিলো ৪১.৫% ও মুসলিম ৫৪%।অপরদিকে পাঞ্জাবে হিন্দু ছিলো ২৬.৫% ও মুসলিম ৫৭%,বাকিসব শিখ ধর্মবালম্বী।
বাংলা ও পাঞ্জাব সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে মুসলিমপ্রধাণ না হওয়ায় এদেরকে দুইটি ভাগ করে ২ টি দেশের মধ্যে দেওয়া হয়।
বাংলা প্রদেশের তখন ডিভিশন ছিলো ৫ টি।ঢাকা,চট্টগ্রাম,রাজশাহী,বর্ধমান ও প্রেসিডেন্সি।

।এরমধ্যে বর্ধমানে হিন্দু ছিলো ৭৮.৯৮% ও মুসলিম ১৩.১৯%,প্রেসিডেন্সিতে হিন্দু ছিলো ৫৩.৭০%,মুসলিম ৪৪.৫৬%,রাজশাহীতে হিন্দু ছিলো ৩০.৬১%,মুসলিম ৬২.৫২%।ঢাকায় হিন্দু ছিলো ২৭.৭০% মুসলিম ৭১.৫৯%,চট্টগ্রামে হিন্দু ছিলো ২০.৭০%,মুসলিম ৭৫.৪০%।

কোন পদ্ধতিতে বাংলা ভাগ হলোঃ

তৎকালীন ব্রিটিশ লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ২ জুন নিজের বাড়িতে তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে একটা মিটিং আয়োজন করলেন।উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাভাগ ও পাঞ্জাবভাগ নিয়ে আলোচনা করা।

মিটিংয়ে কংগ্রেস থেকে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল, আচার্য কৃপালনি।মুসলিম লীগ থেকে ডাকলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, আব্দুর রব নিশতারকে।শিখ জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সরদার বল দেব সিং উপস্থিত ছিলেন।

সাতজনদের সাথে আলোচনা করলেন বাংলাভাগ করা যায় কি না,আর করলেও কোন পদ্ধতিতে করা হবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।

এই সাতজন একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কথা মাউন্ট ব্যাটেনকে বললেন যে,বাংলার এসেম্বলিতে যত মেম্বার আছেন,হিন্দু অধ্যুষিত মেম্বারদের নিয়ে ও মুসলমান অধ্যুষিত মেম্বারদের নিয়ে আলাদা আলাদা করে মিটিং করা হোক।

সেই মিটিং এ যদি হিন্দু/মুসলিম অধ্যুষিত কোনো এক গ্রুপের এমএলএ যদি বাংলাভাগের পক্ষে রায় দেয়,তাহলে বাংলা ভাগ হবে।

এমএলএ রা যে রায় দিলোঃ

তৎকালীন সময়ে বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা ছিলো ১৬ টি।

নোয়াখালী,চট্টগ্রাম,ত্রিপুরা,বাকেরগঞ্জ,ঢাকা,ময়মনসিংহ,ফরিদপুর,যশোর,মুর্শিদাবাদ,মালদহ,নদীয়া,বগুড়া,দিনাজপুর,পাবনা,রাজশাহী ও রংপুর।মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সিলেট জেলা ছিলো তখন আসামের অংশ।

১৯৪৭ সালে বাংলার এসেম্বেলির সদস্য সংখ্যা ছিলো ২২৫ টি।১৬ টি জেলার এমএলএ র সংখ্যা ছিলো ১৪৫ টি।এর মধ্যে মুসলিম ছিলো ১০৩ টি,হিন্দু ৪১ টি,১জন ছিলো ইন্দো-খ্রিষ্টান।
এ মিটিং এ বাংলাভাগের পক্ষে রায় পড়ে ৩৪ টি,বিপক্ষে ১০৬ টি,৪ জন ভোটদান থেকে বিরত থাকে।

আপরদিকে,তৎকালীন বাংলার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা ছিলো ১১ টি।

কলকাতা,হাওড়া,হুগলী,বীরভূম,চব্বিশ পরগণা,বাকুড়া,বর্ধমান, মেদেনীপুর,দার্জিলিং,জলপাইগুড়ি,খুলনা।

১১ টি জেলার মধ্যে এমএলএ র সংখ্যা ছিলো ৮০ টি।এরমধ্যে মুসলিম ২১ টি,হিন্দু ৫৪ টি,অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ৪ টি,ইন্দো-খ্রিষ্টান ১ জন।এ মিটিংয়ে বাংলাভাগের পক্ষে রায় পড়ে ৫৮ টি,বিপক্ষে ২১ টি,ভোট দেননি ১ জন।

যেহেতু একপক্ষ দেশভাগের পক্ষে রায় দেয়,সেহেতু দেশভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও পূর্ববঙ্গ(পাকিস্তান) যেসব এলাকা হারালোঃ

মালদহ জেলাঃ

রেডক্লিফের সিদ্ধান্তের অন্যতম একটি বিরোধ ছিলো মালদহ জেলা বিভক্তি।মালদহ ছিলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা।দেশভাগের সময় প্রায় ৫৫% মুসলিম বাস করতো জেলাটিতে।স্বাভাবিকভাবেই এটি পাকিস্তানে যাবে এটিই ধারণা করেছিলো এখানকার অধিবাসীরা।

১৫ আগষ্টের পর ৩/৪ দিন এখানে পাকিস্তানের পতাকাও উড়েছিলো।কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও জেলাটির বেশীরভাগ অংশই ভারতকে দেওয়া হয়।

এর পেছনে যুক্তি হিসেবে দেওয়া হয় জেলাটির অবস্থান।মালদহ জেলা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন ভৌগলিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব ছিলোনা।

এটি পূর্ববাংলায় চলে গেলে পশ্চিমবঙ্গ দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে যেতো।এজন্য জেলাটির বেশীরভাগ অংশ ভারতকে দেওয়া হয়।

তবে জেলাটির ৫ টি থানাঃ গোমস্তাপুর,নাচোল,ভোলাহাট,চাঁপাইনবাবগঞ্জ,শিবগঞ্জকে পূর্ববঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।বাকি ১১ টি থানা পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হয়।

মুর্শিদাবাদঃ

বাংলার প্রাচীন রাজধানী ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার স্মৃতিবিজরিত মুর্শিদাবাদ জেলা ঐতিহাসিকভাবে একটি বিখ্যাত জেলা ছিলো।

জেলাটির ৭০% জনগণই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো।স্বাভাবিকভাবেই এটি পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিলো।তবে এটিকেও পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত করা হয়।

এর স্বপক্ষে যুক্তি ছিলো কলকাতা বন্দরের নিরাপত্তা।
মূলত গঙ্গা নদীর একটি শাখানদী ছিলো ভগীরথী,যেটি মুর্শিদাবাদের কাছে গঙ্গায় মিলিত হয়েছে।আর এই ভগীরথীর মাধ্যমেই হুলগী নদী তথা কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় থাকতো।

যদি জেলাটি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতো তাহলে চাইলে সহজেই প্রতিবেশী দেশ এটির গতিপথে বাঁধা দিয়ে কলকাতা বন্দরকে নাব্য সংকটে ফেলতে পারতো।ফলে কলকাতা বন্দর কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়তো।

মূলত কলকাতা বন্দর রক্ষার্থে নিরঙ্কুশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাটিকে রেডক্লিফ কমিশন ভারতে অন্তর্ভুক্ত করে।পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ হারায় ঐতিহাসিক একটি জেলাকে।

দিনাজপুর জেলাঃ

দিনাজপুর জেলা অতি অল্প ব্যবধানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো(৫০.২%)।পূর্বদিকে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো বেশী,পশ্চিম অংশ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো।

তবুও ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করায় স্বভাবতই পুরো দিনাজপুর পাকিস্তানের অংশ হওয়ার কথা।

তবে এক্ষেত্রেও ভৌগলিক কারণ একটি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।মালদহ জেলার মতো দিনাজপুর জেলাও যদি পূর্ববঙ্গে যুক্ত হতো তাহলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিন দিকের ভৌগলিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো।

এই বিবেচনায় রেডক্লিফ কমিশন দিনাজপুরকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করে পশ্চিমের অংশটুকু(এক-তৃতীয়াংশ) ভারতকে দেয়,বাকি অংশটুকু পূর্ববঙ্গে যুক্ত হয়।

পূর্ববঙ্গ পায় জেলাটির ৩০ টি থানার পূর্ণ ২০ টি আর হিলি থানার অর্ধাংশ।বাকি ৯ টি জেলা ও হিলির বাকি অর্ধাংশ পায় ভারত।

বালুরঘাট,গঙ্গারামপুর,রায়গঞ্জ মহাকুমা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এদেরকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

তবে এরপরও ভারতের উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

এজন্য বিহারের বাঙালি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপুর মহাকুমাকে দিনাজপুরের সাথে সংযুক্ত করে পশ্চিমবঙ্গের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।

দেশভাগের পরও বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একই নামের বিরাজমান একমাত্র জেলা হলো দিনাজপুর।তবে পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুরকে উত্তর ও দক্ষিণভাগে বিভক্ত করে নতুন দুইটি জেলা করেছে ভারত।

অপরদিকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পোর্শা,পত্নীতলা,সাপাহার,ধামুরহাট থানাকে নওগাঁ জেলাতে এবং অটোয়ারীকে পঞ্চগড়ের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

নদীয়াঃ

নদীয়া ও তৎকালীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা ছিলো।জেলাটির ৬২% মানুষ মুসলিম ও ৩৮% হিন্দু ছিলো।

এখানকার মানুষও স্বাভাবিকভাবে ভেবেছিলো এটি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে।প্রশাসনিকভাবেও সেই তৎপরতা শুরু হয়।

তবে,নাটকীয়ভাবে ১৭ আগষ্ট জানা যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাটিকে দুইভাগে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হবে।

এর স্বপক্ষে যে যুক্তি ছিলো,সেটাও ধর্মীয়।নদীয়াকে কেন্দ্র করেই হিন্দু সম্প্রদায়ের গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধারণা জন্মে।

বৈষ্ণবধারার গুরু শ্রী চৈতন্যের স্মৃতিবিজড়িত জেলাটিকে প্রথম থেকেই রাজনীতিবিদরা পশ্চিমবঙ্গে রাখতে জোর তদবির শুরু করে।পাশাপাশি নদীয়ার মহারাণী জ্যোতির্ময়ী দেবীও জেলাটিকে ভারতে রাখতে জোর তদবির করে।

ফলে জেলাটির ৫ টি মহাকুমার ২ টি কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা পুরোপুরি এবং মেহেরপুর মহাকুমার ৫ টি থানার মধ্যে মেহেরপুর ও গাংনী থানা পায় পূর্ববঙ্গ।ভারত পায় কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহাকুমা এবং মেহেরপুর মহাকুমার বাকি ৩ টি থানা (করিমপুর,তেহট্ট,চাপড়া)।

এ সিদ্ধান্তে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার “অসমাপ্ত আত্মজীবণী” গ্রন্থে রানাঘাট,কৃষ্ণনগর ও মেহেরপুরের অংশ ভারতকে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

যশোর জেলাঃ

দেশভাগের সময় যশোর জেলার কিছু অংশও বিভক্ত হয়ে যায়।তৎকালীন যশোর জেলার ৫ টি মহাকুমা ছিলো।সেগুলো হলঃ যশোর,ঝিনাইদহ,মাগুরা,নড়াইল,বনগাঁও।

এরমধ্যে বনগাঁও মহাকুমা ৫৩% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও একে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে বনগাঁও মহাকুমার একটি থানা মহেশপুরকে পূর্ববাংলার ঝিনাইদহ মহাকুমার সাথে সংযুক্ত করা হয়।

করিমগঞ্জ (সিলেট)

সিলেট তৎকালীন আসামের একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা ছিলো।

দেশভাগের সময় রেডক্লিফ কমিশন সিলেট জেলাকে গণভোটের মাধ্যমে তাদের রায় প্রকাশ করার সুযোগ দেয়।

এতে সিলেটবাসী পাকিস্তানে তথা পূর্ববঙ্গে আসার রায় প্রদান করে।

কিন্তু এরপরও পুরো সিলেট পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

সিলেটের ৫ টি মহাকুমার মধ্যে সিলেট,মৌলভীবাজার,হবিগঞ্জ,সুনামগঞ্জ পূর্ববাংলার অংশ করা হলেও করিমগঞ্জ মহাকুমার প্রায় সব অংশ ভারতের সাথে যুক্ত করা হয়।

এরমধ্যে করিমগঞ্জ থানার অর্ধাংশ (বর্তমানে জকিগঞ্জ উপজেলা)কে সিলেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

করিমগঞ্জকে ভারতে যুক্ত করার পেছনের যুক্তি দেখানো হয় এর ভৌগলিক অবস্থানকে।ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে সেভেন সিস্টার্সের যোগাযোগ রক্ষাকারী সবচেয়ে সহজ উপায় ছিলো করিমগঞ্জই।

এছাড়া আসামের সাথে ত্রিপুরার যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ উপায়ও ছিলো করিমগঞ্জ।এজন্য করিমগঞ্জের বেশীরভাগ অংশই ভারতকে দেওয়া হয়।

হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার সত্বেও পূর্ববঙ্গ(পাকিস্তান) যেসব এলাকা পেলোঃ

খুলনা জেলাঃ

অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলা ছিলো সামান্যতম হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫২%),যার মধ্যে খুলনা মহাকুমা বাদে বাকি সব মহাকুমাই ছিলো মুসলিমপ্রধান।

খুলনা শহরে অনেক হিন্দু ধর্মবালম্বী বাস করতো।তা সত্বেও খুলনাকে পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মূলত ৭০% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদকে ভারতের সাথে যুক্ত করার বদলে খুলনাকে পূর্ববঙ্গের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

অবশ্য খুলনার পূর্ববঙ্গে সংযুক্তি আর্থ-সামাজিক ও ভৌগলিক দিক দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশকে অনেক লাভবান হয়েছে।

খুলনার বদলে মুর্শিদাবাদ পূর্ববঙ্গে যুক্ত হলে আমরা পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে হারাতাম।তাছাড়া বঙ্গোপসাগরের একটা বিশাল অংশও হাতছাড়া হতো আমাদের।

পার্বত্য চট্টগ্রামঃ

পার্বত্য চট্টগ্রামঃ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের দাবি ছিলো তাদেরকে যেনো ভারতের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

তৎকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৯৮% বৌদ্ধ ও ২% মুসলিম বাস করতো।

এখানকার অধিবাসীদের ভারতের সাথে যুক্ত করার দাবি সত্বেও একে পূর্ববঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এর স্বপক্ষে যুক্তি ছিলো চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা।

ভারতের দিক দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক দুর্গম এলাকা ছিলো।অপরদিকে চট্টগ্রামের দিক থেকে নিকটবর্তী ছিলো।তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা চালু রাখার জন্য কর্ণফুলি নদীর নাব্যতা রক্ষা করা জরুরি ছিলো।

কর্ণফুলির উজানের অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম।যদি এটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতো তাহলে প্রতিবেশীরা সহজেই নদীর পানিপ্রবাহ অকার্যকর করে বন্দরকে হুমকির মুখে ফেলার সুযোগ থাকতো।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ভৌগলিক দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

পঞ্চগড় ও দেবীগঞ্জঃ

কোচবিহার জেলার দেবিগঞ্জ থানা এবং জলপাইগুড়ি জেলার পঞ্চগড় মহাকুমাকে পূর্ববাংলার দিনাজপুর জেলার সাথে সংযুক্ত করা হয়।

মূলত বাংলাভাগের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু এলাকা বিশেষত মুর্শিদাবাদ হাতছাড়া হওয়াই আঞ্চলিক নদীভিত্তিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে।যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ ও উত্তরবঙ্গ মরুকরণ প্রক্রিয়া।

তবে খুলনা,পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাপ্তি ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশকে অনেক শক্তিশালী করেছে।

বিশেষত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা বনাঞ্চল বাংলাদেশের প্রকৃতিকে আলাদা বৈচিত্র্যময়তা প্রদান করেছে।

সাথে বাংলাদেশকে করেছে অর্থনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে শক্তিশালী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top