লাউ একটি সহজলোভ্য ও পুষ্টিকর সবজি,যা বাংলাদেশে ব্যপকভাবে খাওয়া হয়।এটি স্বাদে হালকা ও সহজপাচ্য হওয়ায় শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই উপকারী।লাউতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।চলুন আজ জেনে নেই লাউ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
প্রতি ১০০ গ্রাম লাউ এর পুষ্টিগুণঃ
- পানিঃ ৯৫-৯৬%
- ক্যালরিঃ ১৫ কিলক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেটঃ ৩.৭ গ্রাম
- প্রোটিনঃ ০.৬ গ্রাম
- ফাইবারঃ ০.৫ গ্রাম
- ফ্যাটঃ ০.১ গ্রাম
- ভিটামিন সিঃ ১০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি১ঃ ০.০৩ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি২ঃ ০.২২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৩ঃ ০.৩৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৫ঃ ০.১৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৬ঃ ০.০৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৯ঃ ১৯ মাইক্রোগ্রাম
- ক্যালসিয়ামঃ ২৬ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়ামঃ ১৫০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেশিয়ামঃ ১১ মিলিগ্রাম
- জিংকঃ ০.৭ মিলিগ্রাম
- আয়রনঃ ০.২ মিলিগ্রাম
- ফসফরাসঃ ১৩ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজঃ ০.০৬৬ মিলিগ্রাম
লাউ খাওয়ার উপকারিতাঃ
১.হজমশক্তি বৃদ্ধি করেঃ
লাউতে রয়েছে উচ্চ ফাইবার ও পানি যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।এর ক্ষারীয় প্রকৃতি পাকস্থলীর এসিডকে প্রশমিত করে নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে।ফলে পেটের গ্যাস ও বদহজম কমায়।
২.ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম লাউতে মাত্র ১৫ কিলোক্যালরি শক্তি,৩.৭ গ্রাম শর্করা আর ৯৬% পানি থাকে যা আপনাকে ভরপেট ও হাইড্রেটেড রাখে।ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
৩.হার্ট সুস্থ রাখেঃ
লাউতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।এছাড়া এটি আপনার খারাপ কোলেস্টেরল(LDL) কমিয়ে হার্ট এটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৪.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ
লাউয়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) অনেক কম হওয়ায় এটি শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।সাথে দ্রবণীয় ফাইবারসম্বৃদ্ধ হওয়ায় এটি ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে।ফলে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও পড়ুনঃ প্লাস্টিকে ব্যবহৃত ত্রিকোণাকার চিহ্ন কি অর্থ বোঝায়??
৫.কিডনি সুস্থ রাখেঃ
লাউ প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে,যা কিডনি থেকে টক্সিক পদার্থ দিতে বের করে দিতে সহায়তা করে।ফলে কিডনি সুস্থ থাকে।
এটি ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন (UTI) প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
৬.ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ
লাউয়ে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট (ভিটামিন সি) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং এন্টিইনফিলামেন্টারি (ফ্ল্যাভোনয়েড,পলিফেনল যৌগ) মুখের ব্রণ ওঠা কমাতে সহায়তা করে।এছাড়া লাউয়ের রস চুলের গোড়া শক্ত করে এবং খুশকি দূর করে।
৭.শরীর ঠান্ডা রাখেঃ
লাউ খাওয়ার উপকারিতা র মধ্যে এটি অন্যতম।লাউতে একটা প্রাকৃতিক সিডেটিভ বা শীতল গুণ রয়েছে যা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে।এছাড়া এতে ৯৬% পানি থাকায় এটি শরীরকে ডিহাইড্রেট রাখে।ফলে শরীর ও পেট ঠান্ডা থাকে।
৮.রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
লাউতে বিদ্যমান ভিটামিন সি রক্তে শ্বেতকণিকা বৃদ্ধি করে দেহের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।এতে জিংক থাকে যা দেহের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
এছাড়া লাউয়ের ফ্ল্যাভোনয়েড,পলিফেনল,কিউকারবিটাসিন ফ্রি-রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
৯.ডিপ্রেশন দূর করতে সহায়তা করেঃ
ভিটামিন বি ডিপ্রেশন দূরীকরণে সাহায্য করে।
লাউতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমনঃ থায়ামিন (বি১),রিবোফ্লাভিন (বি২),নিয়াসিন(বি৩),প্যান্টোথেনিক এসিড (বি৫),পাইরিডক্সিন (বি৬),ফোলিক এসিড (বি৯) থাকে।এ ভিটামিনগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়া এতে বিদ্যমান কোলিন আমাদের স্ট্রেস ও অ্যাংক্সাইটি দূর করে।
পড়তে পারেনঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবেন যেভাবে।