সাপ!! শব্দটা শুনলেই কেমন যেনো গা শিউরে ওঠে।ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে একটা ভাবনা বদ্ধমূল হয় যে, জলঢোড়া বাদে বাকিসব সাপই বিষধর।এজন্য দেদারসে আমরা সাপ দেখলেই হত্যা করি।তাহলে বাংলাদেশের নির্বিষ সাপ কোনগুলো ?? আসলেই কি সাপ মানেই বিষধর?
এক কথার উত্তর হলোঃ “নাহ”।
বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ প্রজাতির সাপ রয়েছে।এদের মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন রেড কোরাল কুকরি সাপ।এতোগুলো প্রজাতির মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই সাপই সম্পূর্ণ নির্বিষ বা মৃদু বিষধর(এতে মানুষের কোনো ক্ষতি হয়না)।
আর মাত্র ২৬ টা প্রজাতি বিষধর,যার মধ্যে ১৪ টা প্রজাতিই সামুদ্রিক সাপ,আর ২/৩ টা দুর্গম জঙ্গলে থাকে।
সুতারাং দেখা যাচ্ছে হাতে গোনা ৮/৯ টা প্রজাতির বিষধর সাপ আমাদের চারপাশে দেখা যায়।
অথচ আমরা নির্বিচারে সাপ দেখলেই হত্যা করি,যা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য হুমকিস্বরুপ।
চলুন আজকে জেনে নেই বাংলাদেশের পরিচিত কিছু নির্বিষ সাপ সম্পর্কে,যাদের কোনো বিষ নেই।
১.দাঁড়াশ সাপ (Rat Snake)
দাঁড়াশ বাংলাদেশের আবাসিক সাপ।তাই,দেশের সর্বত্রই সাপটি দেখতে পাওয়া যায়।
সাধারণত যেখানে ইঁদুরের সংখ্যা বেশী,সেখানেই সাপগুলো বাস করে।কৃষকের মাঠ,বসতবাড়ির আশেপাশে সাপগুলো সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায়।
এদের গায়ের রং হালকা বাদামি বা হলুদ বাদামি বা জলপাই বাদামি।সবুজ ও কালো রঙের বিরল প্রজাতির দাঁড়াশ সাপও বাংলাদেশে কালেভদ্রে দেখতে পাওয়া যায়।
এর গায়ের রঙের সাথে গোখরার মিল থাকায় অনেকে একে গোখরা ভেবে ভূল করে।তাই মারাও পড়ে বেশী।
এরা লম্বায় সাধারণত ২-৩ মিটার হয়।দেহ সরু ও লেজের প্রান্তভাগ সুচালো।স্ত্রী দাঁড়াশ ৫-২২ টি ডিম পাড়ে,যেগুলো আঠার মতো পরস্পরের সাথে লেগে থাকে।
স্ত্রী সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে,ডিমগুলোকে পাহারা দেয়।দুইমাসের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
দাঁড়াশ গাছ বেয়ে উঠতে সক্ষম ও অনেক দ্রুত চলতে পারে।
এদের প্রধান খাবার ইঁদুর।এছাড়া ছুঁচো,ছোট পাখি,ডিম ইত্যাদিও খায়।
সাপটি সম্পূর্ণ নির্বিষ।কিন্তু সুচালো লেজ থাকায় অনেকে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে যে,এই সাপের লেজে কাটা থাকে,আর তাতে বিষ থাকে।মানুষের শরীরের যে জায়গাতে এই কাটা লাগে,সেই জায়গাতে পঁচন ধরে।
কিন্তু এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব ও ভুল ধারণা।
এরা খুবই নিরীহ সাপ,তবে কিছুটা আক্রমণাত্বক।ভয় পেলে আক্রমণ করে।
দাঁড়াশ আমাদের পরিবেশের সবচেয়ে উপকারী সাপ।এটি মাঠের ইঁদুর খেয়ে কৃষককে ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে,প্রতিবছর ইঁদুরের কারণে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়।প্রাকৃতিকভাবে দাঁড়াশের বংশবিস্তার বৃদ্ধি করতে পারলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশেই রক্ষা করা সম্ভব।
২.দুধরাজ সাপ (Copper Headed Trinket Snake)
দুধরাজ দেশের সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়।এটিও এশিয়া ও বাংলাদেশের আবাসিক সাপ।সাধারণত বসতবাড়ির আশেপাশে,ঝোপ বা জঙ্গলে সাপগুলো বাস করে।
এদের দেহের বেশীরভাগ অংশই তামাটে বর্ণের।মাথা জুড়ে রয়েছে কালো রেখা এবং চোখের পেছনে ইংরেজি V আকৃতির মতো কালো রেখা আছে,যা ঘাড়ের রেখার সাথে যুক্ত হয়েছে।
দেহের পেছনের অংশ ধূসর বাদামি বা হলুদ বাদামি।এর সারাদেহে কালো ডোরাকাটা থাকে।তবে সম্পূর্ণ লাল রঙের একটি অত্যন্ত বিরল দুধরাজ সাপও দেখতে পাওয়া যায়।
এর ঘাড় থেকে একটা কালো স্ট্রিপ লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
এটি সাধারণত ১.৫-২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।স্ত্রী দুধরাজ ৫-১৫ টি ডিম দেয়।
এরা সাধারণত গিরগিটি,ইঁদুর,কাঠবিড়ালি,পাখির বাচ্চা খায়।
এটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলতে পারে,আবার লাফিয়েও চলে।এজন্য স্থানীয়ভাবে অনেকেই একে জাম্পিং সাপ ও বলে।
দুধরাজ সম্পূর্ণ নির্বিষ সাপ।কিন্তু অত্যন্ত আক্রমণাত্বক ও হিংস্র প্রকৃতির।এটি যখন কাউকে আক্রমণ করে তখন দেহকে ১ মিটার পর্যন্ত উপরে তুলতে পারে,তখন দেহ ইংরেজি S আকৃতির মতো করে ফেলে।দেহ তখন চ্যাপ্টা আকার ধারণ করে।
সাপটির নাম দুধরাজ হলেও সে কিন্তু দুধ খায়না অথবা দুধ দেয় ও না।কিছু মানুষ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে যে,এই সাপ গাভীর উলন থেকে দুধ খেয়ে ফেলে।কিন্তু শুধু দুধরাজ কেন,প্রকৃতপক্ষে কোনো সাপই চুষে কিছু খেতে পারেনা কারণ সাপের জিহ্বা দুভাগ থাকে।এ জিহ্বা দিয়ে কোনো জিনিসই চুষে খাওয়া সম্ভব না।তবে পাত্রে রাখলে বা খোলা জায়গা থেকে এরা পানি বা অন্য তরলবস্তু খেতে পারে।
একটা সময় প্রচুর দেখা গেলেও সাপটি এখন কম দেখা যায়।কারণ মানুষ সাপ দেখলেই মেরে ফেলে।অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসব সাপের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও পড়ুনঃ
Transcontinental Counties,যেদেশগুলোর অবস্থান একাধিক মহাদেশে।
৩.বেত আঁচড়া সাপ (Common Bronzeback Tree Snake)
বেত আচড়া সাধারণত বন-জঙ্গল ও ঝোপঝাড়ে বাস করে।এরা গাছে থাকতেই বেশী পছন্দ করে।
এদের শরীরের দুদিকেই গাঢ় বাদামি বা কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকে।শরীরের পেছনের অংশ কিছুটা তামাটে বা কালচে বাদামি রঙের।মাথার সামনের অংশও বাদমি।
এদের দেহ সরু ও লম্বা।আঁশগুলো মসৃণ।পেজ ও লেজের তলার আঁশগুলো পেছনের দিকে মোড়ানো।মাথা ঘাড়ের চেয়ে বড়।লেজ অনেক লম্বা।
এরা সাধারণত ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।স্ত্রী সাপ ৬-৮ টা ডিম দেয়।ডিমগুলো গাছের কোটরে কিংবা পঁচা খাদ্যশস্যের মধ্যে পাড়ে।ডিম ফুটতে ৮৫-১২৫ দিন সময় লাগে।
এদের প্রধান খাবারগুলো হলোঃ ব্যাঙ,টিকটিকি,ছোটপাখি,পাখির ডিম,পোকামাকড়।
সাপটি সম্পূর্ণ নির্বিষ ও ভীতু প্রকৃতির।তবুও মাঝে মাঝে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসলে মানুষ অজ্ঞতাবশত মেরে ফেলে।
এরা অতি দ্রুত চলাচল করতে পারে।পেটের খোঁচা খোঁচা অংশের জন্য সহজেই উপরে উঠতে পারে।সাপগুলো এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে চলতে পারে।এরা যখন লাফ দিয়ে অন্য ডালে যায়,তখন অনেকটা বেতের মতো আছড়ে পড়ে।এজন্য এদের নাম বেত আচড়া হতে পারে।
সাপগুলো আগে বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক দেখা গেলেও বর্তমানে খুবই কম দেখা যায়।বনাঞ্চলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এদের সংখ্যাও আজ কমতির দিকে।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাপগুলোকে রক্ষা করা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
৪.ঘরগিন্নি/ঘরচিতি সাপ (Common Wolf Snake)
ঘরগিন্নী সাপ আমাদের বাড়িঘরের চারপাশে সবথেকে বেশী দেখা যায়।সাধারণত ঘরবাড়ি,ভাঙা দালানকোঠা,ইটের পাঁজা,গাছের খোড়ল ইত্যাদিতে বাস করে।
এদের গায়ের রং চকচকে ও ধূসর খয়েরী বা বাদামী।দেহ সাধারণত সরু,আঁশ মসৃণ।মাথা চওড়া ও ঘাড়ের চেয়ে সামান্য বড়।ঘাড়ের থেকে আড়াআড়িভাবে সাদা ও হলদেটে দাগ থাকে।চোখ দুটো সম্পূর্ণ কালো।
এরা ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।স্ত্রী সাপ পুরুষ সাপ থেকে বড় হয়।স্ত্রী সাপ সাধারণত ৪-১১ টি ডিম পাড়ে।সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডিম ফুটে।
এদের প্রধান খাবার টিকটিকি।তবে ছোট ব্যাঙ,ফড়িং ইত্যাদিও খেয়ে থাকে।এরা নিশাচর সাপ।রাতে হারহামেশাই এদের দেখতে পাওয়া যায়।এরা দেয়াল বাইতেও সক্ষম।
ঘরগিন্নীর সামনের দুটো উঁচু দাঁত থাকে,যা দেখে একে বিষধর সাপ মনে হতে পারে।কিন্তু এটি সম্পূর্ণ নির্বিষ সাপ।এরা খুবই নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের।তবে উত্তেজিত হলে কামড়াতে আসে।
ঘরচিতি ও কালাচের মধ্যে পার্থক্যঃ
এদের দেহের ব্যান্ডের গঠন অনেকটা কালাচ/কালচিতির মতো হওয়ার কারণে অনেকেই একে কালাচ ভেবে ভূল করে।ফলে প্রতিবছর বহুসংখ্যক ঘরগিন্নি সাপ মারা পড়ে।
কালাচ ও ঘরচিতির মূল পার্থক্য হলো এদের দেহের রঙে।কালাচের দেহ সম্পূর্ণ কালো।ঘরগিন্নীর ধূসর বাদামি বা খয়েরী।
কালাচের দেহে কালোর পর সাদা ব্যান্ড থাকে।ঘরচিতির দেহে খয়েরী বা ধূসর বাদামির পর হলদেটে সাদা ব্যান্ড থাকে।
কালাচের শরীরের ব্যান্ডগুলো পিঠ থেকে শুরু হয়,আর লেজ পর্যন্ত একই ব্যান্ড বিদ্যমান থাকে।ঘরগিন্নীর ব্যান্ডগুলো শুরু হয় একদম ঘাড় থেকে।কোমরের পর কিছুদূর গিয়ে দাগগুলো আবছা হয়ে যায়।
৫.হেলে সাপ (Buff Stripped Keelback Snake)
হেলে সাপও বাংলাদেশে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়।স্থানীয়ভাবে একে দাগিঢোড়া,ঘেটিসাপ,চেলাসাপ ও বলে।জলাশয়ের আশেপাশে,ঘন ঝোপঝাড়ে এরা বাস করে।
এরা সাধারণত ৪০-৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।তবে সর্বোচ্চ ৯০ সেমি দৈর্ঘ্যের সাপও পাওয়া গেছে।স্ত্রী সাপ পুরুষ সাপ থেকে দীর্ঘ হয়।স্ত্রী সাপ ৫-১৬ টি ডিম পাড়ে।ডিম ফোটার আগ পর্যন্ত স্ত্রী সাপ ডিমের সাথেই থাকে।বাচ্চা হেলে ১৩-১৭ সেমি লম্বা হয়।
এরা ছোট উভচর প্রাণী,ব্যঙ,মাছ,কেঁচো ও পোকা খায়।এরা দিনে সক্রিয় থাকে।
হেলে সম্পূর্ণ নির্বিষ সাপ।এরা অত্যন্ত ভীতু ও নিরীহ ধরনের হয়।মানুষ দেখলেই পালিয়ে যায়।
৬.পুয়েসাপ/ব্রাহ্মনী দুমুখো সাপ (Brahminy Blind Snake)
বাংলাদেশের সর্বত্রই সাপটি দেখতে পাওয়া যায়।এদেরকপ গর্ত,বন-জঙ্গল,ঘাসবন,কৃষিজমি ও আবাসভূমির আশেপাশেই দেখতে পাওয়া যায়।
দেখতে অনেকটা কেঁচোর মতো।তবে কেঁচোর মতো নলাকার দেহ হলেও এদের শরীরে কোনো খন্ডায়ন থাকেনা।অনেক এলাকায় এদেরকে মাটিও সাপও বলে।এরা মাটির নিচে থাকতেই পছন্দ করে।
ত্বক ধূসর রূপালি বা ঈষৎ বাদামি রঙের হয়।এদের মাথা ও ঘাড় সুস্পষ্টভাবে পৃথক নয়।চক্ষু অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকার,ছোট বিন্দুর মতো।দেখা যায়না বললেই চলে।এজন্য এদেরকে ব্লাইন্ড স্নেকও বলে।এদের মাথা ও লেজের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।একইরকম দেখতে।এজন্য এদেরকে দুমুখো সাপ ভেবে অনেকে ভূল করে থাকে।এদের মুখ একটাই।
পুঁয়েসাপ ৬-১৭ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।সাপটি পিঁপড়া,উইপোকার ডিম খেয়ে জীবণধারণ করে।
মার্চ থেকে জুন মাস এদের প্রজনন মৌসুম।এরা মূলত পার্থেরোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করতে পারে।অর্থাৎ অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে বাচ্চা দেয়।এ প্রজাতির পুরুষ সাপ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়নি।
স্ত্রী সাপ ৪-১৪ টি ডিম পাড়ে,তবে ডিমগুলো দেহের মধ্যে থাকা ডিমথলিতেই পাড়ে।কিছুদিন পর সেগুলো থেকে বাচ্চা প্রসব করে।
এরাও সম্পূর্ণ নির্বিষ সাপ এবং কাউকে কামড়ায় না।হালে নিলে কিলবিল করে,কখনও কখনও মলত্যাগও করে।
৭.ডিমখোর সাপ (Indian Egg-Eater Snake)
ডিমখোর বাংলাদেশের একটি বিরল প্রজাতির সাপ।আগে সচরাচর দেখা গেলেও এখন কালেভদ্রে দেখা মেলে।দেশের উত্তরাঞ্চলই মূলত এদের আবাসস্থল।
এরা সাধারণত গাঢ় বাদামি বা কালচে বাদামী বর্ণের।মাথা বাদামি বর্ণের হয়,যাতে কালো তীরচিহ্ন যুক্ত থাকে।ঘাড় থেকে লেজের প্রান্তভাগ পর্যন্ত পিঠের মাঝ বরাবর ক্রিমসদৃশ লম্বা দাগ থাকে।পেটের অংশ সাদা।
এটি সচরাচর ১ মিটার মতো লম্বা হয়।মূলত পাখির ডিমই এদের প্রধান খাবার।এছাড়া ছোট কীটপতঙ্গও খেয়ে থাকে।
এরা প্রায় সব ধরনের পাখির ডিম খায়।এরা ডিমগুলো গিলে ফেলে।বিশেষভাবে অভিযোজিত হওয়ায় এরা পেটের মধ্যেই ডিমগুলোকে ফাটিয়ে ফেলতে পারে এবং পরবর্তীতে খোসাগুলো উগরে দিতে পারে।
এরা দিবাচর ও নিশাচর উভয়ই।সম্পূর্ণ নির্বিষ ও শান্ত স্বভাবের সাপ।তবে বিপদে পড়লে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে দেহের সম্মুখভাগ তুলে ইংরেজি “S” আকৃতির মতো গঠন তৈরি করে।
৮.জলঢোড়া (Checkered Keelback)
বাংলাদেশে যে সাপটি সবচেয়ে বেশী দেখা যায়,তা হল জলঢোড়া।সাধারণত জলাশয় বা পানির আশেপাশে গর্তে সাপটি বাস করে।জলাশয়ের আশেপাশের ঘাসের জমি,ঝোপ-জঙ্গলে এদেরকে ঘুরতে দেখা যায়।
শক্ত গড়নের গোলাকার দেহের সাপটির দেহের সামনের দিক হলদেটে বা জলপাই সবুজ রঙের।তাতে কালো সুন্দর নকশা থাকে।দেহের পেছনের দিক হলদেটে সাদা।জলপাই বাদামি মাথাটা দেখতে ডিম্বাকৃতির বা কিছুটা ত্রিকোণাকার।চোখগুলো বড় বড়।
জলঢোড়া সচরাচর ১-১.৫ মিটার লম্বা হয়।মাছই এদের প্রধান খাদ্য।এছাড়া ব্যাঙ,চিংড়ি,কখনও ছোট ইদুর ও খায়।বাচ্চা ঢোড়া ব্যাঙাচি,মাছের পোনা,পোকা ইত্যাদি খায়।
ডিসেম্বর-মার্চ মাস এদের প্রজনন মৌসুম।এসময় স্ত্রী সাপ ৩০-১০০ টি ডিম পাড়ে এবং তা পাহারা দেয়।সাধারণত ৪০-৯০ দিনে ডিম ফোটে।
এরা দিবাচর,নিশাচর উভয় প্রজাতিরই।
সাপটি সম্পূর্ণ নির্বিষ।তবে কিছুটা ক্ষ্যাপাটে প্রকৃতির।বিপদে পড়লে ঘাড় চ্যাপ্টা করে গোখরার মতো ফণা করতে চায়।এরা অত্যন্ত ভীতু প্রকৃতির সাপ।ভয় পেলে বা ধরতে গেলে কামড়াতে আসে।এদের কামড় যন্ত্রণাদায়ক,তবে এতে সামান্যও ক্ষতি হয়না।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দশটি শহর।।
৯.চিত্রিত ঢোড়া (Painted Keelback)
চিত্রিত ঢোড়াও জলঢোড়ারই জাতভাই বলা চলে।সারাদেশপ কমবেশি এদের দেখতে পাওয়া যায়।এরাও জলাশয়ের বাসিন্দা।
এদের দেহের সামনের দিকে গাঢ় বাদামি বা জলপাই বাদামি রঙের মিশ্রণ থাকে।দেহের পৃষ্ঠপাশে প্রায় ঘাড় হতে লেজ পর্যন্ত দুপাশে হলদে দাগ থাকে।লেজ লম্বা হয়,প্রায় ৫.৫ ইঞ্চির মতো।
এটি সাধারণত ৬০ সেমি-১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।মাছ,ব্যাঙ,চিংড়ি মূলত দাগি ঢোড়ার প্রধান খাদ্য।
এপ্রিল-আগষ্ট মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম।স্ত্রী সাপ ১৬-২০ টি ডিম দিয়ে থাকে।
পরিশেষে বলতে চাই,প্রকৃতির কোনো প্রাণীই অহেতুক সৃষ্টি হয়নি।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটা প্রাণীর গুরুত্বই অপরিসীম।সাপও আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখে।তাই বিনা কারণে কোনো সাপকে মারবেন না।কোনো বিষধর সাপ উদ্ধারের জন্য জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল দিয়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে অবহিত করবেন,অথবা নিকটস্থ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেসকিউয়ারকে খবর দিবেন।
তথ্যসূত্রঃ
১.https://www.wikipedia.org
২.Deep Ecology & Snake Rescue Organization
৩.Reptiles Bangladesh
৪.https://www.deshrupantor.com/science
৫.https://www.jagonews24.com/agriculture
৬.সাপ–কৌশিক গাঙ্গুলি (বই)
৭.https://indiabiodiversity.org/species
৮.সাধারণ ভারতীয় সাপ–রমুলাস হোয়াটেকার (বই)
৯.https://m.facebook.com/story.php?story_fbid
১০.https://www.quora.com/Why-dont-snakes-drink-milk
Really nice and informational.