পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দশটি বিড়াল প্রজাতির প্রাণী।।

বিড়াল প্রজাতির প্রতিটি প্রাণী দেখতে যেমন সুন্দর,তেমনি অনন্য।
পৃথিবীতে বর্তমানে ৪১ টি বিড়াল প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে।এর মধ্যে ৪০ টি বন্য,একটি প্রজাতি আমাদের গৃহপালিত।এরা ফেলিডে পরিবারের অন্তর্গত।ফেলিডে পরিবার আবার ২ টি উপ-পরিবার নিয়ে গঠিত।এর মধ্যে একটি প্যান্থেরিনা,যাদেরকে বড় বিড়াল প্রজাতি বলে।এই ধরনের বিড়াল প্রজাতির সংখ্যা ৭ টি।

বাকি প্রজাতিগুলো ফেলিনা উপ-পরিবারের,যাদেরকে ছোট বিড়াল বলে।অস্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে কোনো বন্য বিড়ালের প্রজাতি নেই।বাকি সব মহাদেশে এদের অস্তিত্ব রয়েছে।

১.বাঘঃ (Panthera tigris)

বাঘ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিড়াল প্রজাতি র প্রাণী।

বাঘের ওজন সাধারণত ১২৬-২২১ কেজি হয়ে থাকে।তবে এখন পর্যন্ত যাচাই করা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঘটির ওজন ছিলো ৩১৭ কেজি।

বাঘের দেহের দৈর্ঘ্য ২.৩-৩.৯ মিটার (৭’৬” -১৩ ফুট) এর মধ্যে,দেহের উচ্চতা ৭০-১১০ সে.মি।

এদের জীবণকাল ১০-১৫ বছরের মধ্যে।বাঘ সাধারণত গভীর বন বা জঙ্গলে থাকতে পছন্দ করে।এরা একাকী চলাচল ও শিকার করতে পছন্দ করে।ঘন্টায় ৬০ কি.মি বেগে দৌড়াতে পারে।

প্রকৃতিতে সাইবেরিয়ান,রয়েল বেঙ্গল,সুমাত্রান,কাস্পিয়ান,সাউথ চাইনিজ,জাভান,ইন্দোচীন,মালয়,বালি এই ৯ টা উপপ্রজাতির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এরমধ্যে কাস্পিয়ান,জাভা,বালি,সাউথ চাইনিজ টাইটার ইতোমধ্যে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।তবে শ খানেক সাউথ চাইনিজ টাইগার এখনো চিড়িয়াখানাতে টিকে রয়েছে।

উপপ্রজাতিগুলোর মধ্যে সাইবেরিয়ান টাইগার আকারে সবচেয়ে বড়।দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ,ভারত,রাশিয়া,উত্তর কোরিয়া,মালয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া,মিয়ানমার,ভিয়েতনাম,থাইল্যান্ড,কম্বোডিয়াতে বাঘের দেখা মেলে।সবচেয়ে বেশী বাঘ টিকে রয়েছে রাশিয়াতে।

একসময় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা গেলেও এর অস্তিত্ব বর্তমানে শুধু সুন্দরবনেই পাওয়া যায়।

সাইবেরিয়ান টাইগার বাদে বাঘের বাকি সব প্রজাতিই প্রায় প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে।

২.সিংহঃ (Panthera leo)

সিংহের গড় ওজন ১৬০-১৯৫ কেজির মধ্যে।তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া সিংহের যাচাইকৃত সর্বোচ্চ ওজন ৩১৩ কেজি।

এদের দৈর্ঘ্য ২.৭-৩.৫ মিটার (৮’১০”-১১.৫ ফুট) এর মধ্যে।উচ্চতা ৯০-১৩৫ সে.মি।

সিংহকে বনের রাজা বলা হলেও এরা আসলে বনে থাকে না।এরা মূলত তৃণভূমি,সাভানা,গুল্মজাতীয় ছোট ঝোপে থাকে।

এদের গড় আয়ু ১০-১৪ বছর।তবে সিংহের চেয়ে সিংহীরা বেশিদিন বাঁচে।সিংহের ঘাড়ে কেশর (লোমযুক্ত আস্তরণ) থাকে।কিন্তু সিংহীর এটা থাকেনা।এরা দলবদ্ধ হয়ে শিকার করে।সিংহ ঘন্টায় ৮০ কি.মি বেগে দৌড়াতে পারে।

প্রকৃতিতে আফ্রিকান ও এশিয়ান নামের সিংহের দুইটি উপ-প্রজাতি বাস করে।তবে এশিয়ন সিংহ ভারতের পশ্চিমের কিছু এলাকা ছাড়া এশিয়ার বাকি সব দেশে থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

আফ্রিকা মহাদেশই বর্তমানে সিংহের মূল আবাসস্থল।

বর্তমানে তাঞ্জানিয়া,দক্ষিণ আফ্রিকা,বতসোয়ানা,নামিবিয়া,জাম্বিয়া,কেনিয়া,উগান্ডা,নাইজার মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র,সুদান,ক্যামেরুন,সেনেগাল,মালাবি,ইথিয়পীয়া,জিম্বাবুয়ে,অ্যাঙ্গোলা,মোজাম্বিক,ভারত ইত্যাদি দেশে সিংহ পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বেশী সংখ্যক সিংহ বাস করে তাঞ্জানিয়াতে।

৩.জাগুয়ারঃ (Panthera onca)

দুই আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় বিড়াল প্রজাতি জাগুয়ারের গড় ওজন ৫৬-১০৫ কেজি।তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া জাগুয়ারের যাচাইকৃত সর্বোচ্চ ওজন ১৪৮ কেজি।

এদের দৈর্ঘ্য ১.৮-২.৭ মিটার (৫ ফুট ১০ইঞ্চি-৮ ফুট ১০ ইঞ্চি) এর মধ্যে।উচ্চতা ৬৮-৮০ সে.মি।

জাগুয়ার মূলত ঘনবন,তৃণভূমি,সাভানা এমনকি জলাভূমির আশেপাশেও থাকে।এদের মূল আবাসস্থল আমাজন রেইনফরেস্ট।

গড় আয়ু ১২-১৫ বছর।এরা একাকী চলাচল ও শিকার করে।জাগুয়ার ঘন্টায় ৮০ কি.মি বেগে দৌড়াতে পারে।

জিনগতভাবে জাগুয়ারের কোনো উপপ্রজাতি নেই।তবে অঞ্চলভেদে এদের দেহের আকারের কিছুটা তারতম্য রয়েছে।দক্ষিণ আমেরিকান জাগুয়ারেরা মধ্য আমেরিকানদের চেয়ে আকারে কিছুটা বড় হয়।

বর্তমানে জাগুয়ার ব্রাজিল,বলিভিয়া,ইকুয়েডর,কলম্বিয়া,গায়ানা,ফ্রেন্স গায়ানা,সুরিনাম,ভেনিজুয়েলা,পেরু,আর্জেন্টিনা,প্যারাগুয়ে,মেক্সিকো,নিকারাগুয়া,গুয়াতেমালা,কোস্টারিকা,যুক্তরাষ্ট্র,পানামা,বেলিজ ও হন্ডুরাসে পাওয়া যায়।

একসময় এল সালভাদর ও উরুগুয়েতে পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী জাগুয়ার পাওয়া যায় ব্রাজিলে।

৪.পুমা/কোগারঃ (Puma concolor)

প্রাণীটি দক্ষিণ আমেরিকাতে পুমা ও উত্তর আমেরিকাতে কোগার নামে ডাকা হয়।

পুমার গড় ওজন ৫৩-৭১ কেজি।তবে রেকর্ড ১০৫.২ কেজি ওজনের পুমার অস্তিত্বও পাওয়া গেছে।

পুমার দৈর্ঘ্য ১.৫-২.৪ মিটার (৪’১১”-৭’১০”)।উচ্চতা ৫৩-৮৮ সে.মি।

এরা পর্বত,ঘনবন,মরুভূমি,তৃণভূমি প্রায় সব জায়গাতেই বাস করে।পর্বতাময় অঞ্চলে এদের একটা বিরাট অংশ বাস করে বলে এদেরকে “পর্বত সিংহ” ও বলা হয়।

পুমার গড় আয়ু ১৩-১৮ বছর।স্ত্রীরা পুরুষদের চেয়ে বেশীদিন বাঁচে।এরা একাকী চলাচল ও শিকার করে।ঘন্টায় ৮০ কি.মি/ঘন্টা বেগে দৌড়াতে পারে।

পুমা মাটি থেকে প্রায় ১৮ ফুট(৫.৫ মিটার) পর্যন্ত লাফ দিতে পারে এবং পাহাড়ের ঢালে প্রায় ২০ ফুট (৬.১ মিটার) পর্যন্ত লাফিয়ে উঠতে পারে।এরা ভালো সাঁতারু,তবে পানিতে নামতে তেমন একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনা।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র,মেক্সিকো,কানাডা,ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা,চিলি,ইকুয়েডর,ভেনিজুয়েলা,বলিভিয়া,বেলিজ,এল সালভাদর,হন্ডুরাস,নিকারাগুয়া,পানামা,প্যারাগুয়ে,পেরু,সুরিনাম ইত্যাদি দেশে এ বড় বিড়াল প্রজাতি র অস্তিত্ব রয়েছে।

তবে কানাডাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুমা বা কোগার পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের নির্বিষ বা অবিষধর সাপ কোনগুলো??

৫.লেপার্ডঃ (Panthera pardus)

লেপার্ডের গড় ওজন ৩০-৬৬ কেজি।তবে যাচাইকৃত সর্বোচ্চ ১০৮ কেজির লেপার্ডও প্রকৃতিতে পাওয়া গেছে।

এদের দৈর্ঘ্য ১.৬-২.৩ মিটার ( ৫’৩”-৭’৬”)।উচ্চতা ৪৪-৭৮ সে.মি।

এদের গড় আয়ু বন্য অবস্থাতে প্রায় ১০-১২ বছর।একাকী শিকার করে।এদের গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৬০ কি.মি।

মরুভূমি,শুষ্ক অঞ্চল,সাভানা,তৃণভূমি,বনভূমি,পর্বত,রেইনফরেস্ট এমনকি শহুরে অঞ্চলেও এটি নিজেকে অভিযোজিত করেছে।পানি না খেয়েও এরা ১০ দিন থাকতে পারে।

লেপার্ড গাছে চড়তে খুব দক্ষ।প্রায়শ তার শিকারকে গাছের শাখার উপরে তুলে নিয়ে যায়।এমনকি গাছের উপর থেকে লাফ দিয়ে সে শিকারকে আক্রমণও করে।মানুষকে আক্রমণেরও রেকর্ড আছে।

এরা প্রায় ২০ ফুট(৬ মিটার) লম্বা ও ১০ ফুট (৩মিটার) লাফ দিতে সক্ষম।

প্রকৃতিতে এদের ৯ টি উপপ্রজাতি রয়েছে।তবে আফ্রিকান লেপার্ড বাদে বাকি সবগুলোই বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত।

বর্তমানে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ,মধ্যপ্রাচ্য,চীন,ভারত,রাশিয়া,তুরস্ক,তুর্কমেনিস্তান,উজবেকিস্তান,ইরান,পাকিস্তান,আফগানিস্তান,বাংলাদেশ,শ্রীলঙ্কা,মিয়ানমার,ইন্দোনেশিয়াতে লেপার্ড পাওয়া যায়।

সবচেয়ে বেশী সংখ্যক লেপার্ড আফ্রিকা মহাদেশের জাম্বিয়াতে বাস করে।

একসময় বাংলাদেশের সিলেট,চট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগ্রাম,কক্সবাজার,মধুপুরগড় ও ভাওয়ালগড়ে এদের দেখা গেলেও বর্তমানে এদেরকে প্রকৃতি থেকে প্রায় বিলুপ্ত হিসেবে ধরা হয়।ধারণা করা হয় ৫০ টার মতো লেপার্ড এখনো বাংলাদেশে টিকে আছে।

৬.চিতাঃ (Acinonyx jubatus)

বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম স্থল প্রাণী হলো লেপার্ড।ঘন্টায় এর গতিবেগ প্রায় ১১০ কি.মি।

লম্বা পা ও সরু দৈহিক আকার এদেরকে অন্যসব ছোট বা বড় বিড়াল প্রজাতি থেকে দ্রুত চলতে সাহায্য করে।
এদের পায়ের প্যাড অন্যসব বিড়াল প্রজাতির তুলনায় শক্ত ও কম গোলাকার।ফলে দৌড়ানোর সময় এটি টায়ারের মতো তাদের ট্রাকশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।যার ফলে এরা দ্রুত দৌড়াতে পারে।

চিতা এক লাফে প্রায় ৭ মিটার (২৩ ফুট) পর্ন্ত অতিক্রম করতে পারে এবং প্রতি সেকেন্ডে চারটি লাফ দিতে পারে।

চিতার গড় ওজন ৩৬-৫৫ কেজি।তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া সর্বোচ্চ ওজন ৬৯ কেজি।

দৈর্ঘ্য ১.৫-২.৩ মিটার (৪’১১”-৭’৬”), উচ্চতা ৭০-৯৪ সে.মি।

গড় আয়ু বন্য অবস্থাতে ৮-১০ বছর।সাধারণত শুষ্ক অঞ্চল,খোলা মাঠ,তৃণভূমি,উচ্চভূমি,সাভানাতে এদের দেখা যায়।

এরা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে,তবে শিকার একাকী ও দলবদ্ধ উভয়ভাবেই করে থাকে।

চিতা অন্যসব বিড়াল প্রজাতির মতো রাতে শিকার করেনা।ভোরবেলা ও বিকেলে এরা বেশী সক্রিয় থাকে।

নামিবিয়া,দক্ষিণ আফ্রিকা,বতসোয়ানা,অ্যাঙ্গোলা,মোজাম্বিক,জাম্বিয়া,তাঞ্জানিয়া,সোমালিয়া,ইথিওপিয়া,মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র,কেনিয়া,শাদ,ক্যামেরুন,ইরান ইত্যাদি দেশে এদেরকে পাওয়া যায়।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী চিতা বর্তমানে নামিবিয়াতে পাওয়া যায়।

এদের চারটি উপপ্রজাতি থাকলেও এশিয়ান চিতা প্রায় বিলুপ্তির পথে।বর্তমানে ইরানে ৫০ টিরও কম এশিয়ান চিতা বন্য অবস্থাতে টিকে আছে।

৭.তুষার চিতাঃ (Panthera uncia)

এদের গড় ওজন ৩০-৪০ কেজি,তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচাইকৃত সর্বোচ্চ ওজন ৫৩.৮ কেজি।

এদের দৈর্ঘ্য ০.৯-১.৫ মিটার। (২’১১”-৪’১১”)।উচ্চতা ৬০-৬৬ সে.মি।

গড় আয়ু ১০-১২ বছর।এরা একাকী শিকার করে।শিকার করার সময় ঘন্টায় ৬৫ কি.মি গতিতে দৌড়াতে পারে।

তুষার চিতা সাধারণত তুষারাবৃত পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়।এদের দেহ প্রায় ৫ সে.মি লম্বা পশম দ্বারা আবৃত থাকে।ফলে শীতপ্রধান অঞ্চলে এরা টিকে থাকতে পারে।

শক্তিশালী দৈহিক গঠন থাকায় এরা উঁচু পর্বত বা পাথুরে ঢাল বেঁয়ে সহজেই উঠতে পারে।
অন্যান্য বিড়ালজাতীয় প্রাণীর দৈহিক আকারের তুলনায় এদের থাবা কিছুটা বড় হয়,যা তাদেরকে বরফের উপর হাঁটতে সহায়তা করে।

দেহের লোমের বিশেষ রংয়ের জন্য এরা সহজেই তুষারাবৃত পাহাড়ের মিশে যেতে পারে।তাই প্রায়শই এদেরকে “পাহাড়ের ভূত” বলা হয়ে থাকে।

তুষার চিতার ৩ টা উপপ্রজাতির প্রত্যেকটিই বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত।এরা সবাই এশিয়া মহাদেশে বাস করে।

বর্তমানে আফগানিস্তান,পাকিস্তান,ভারত,নেপাল, ভুটান,চীন,মঙ্গোলিয়া,রাশিয়া,উজবেকিস্তান,তাজিকিস্তান,কিরগিজিস্তান,কাজাখস্তানে এদেরকে দেখা হয়।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশী তুষার চিতা চীনে বাস করে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো!!

৮.মেঘলা চিতাঃ (Neofelis nebulosa)

এদের গড় ওজন ১৫-২৩ কেজি।এখন পর্যন্ত পাওয়া সর্বোচ্চ ওজন ২৬ কেজি।

পুরুষদের ওজন স্ত্রীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়।
মেঘলা চিতার দৈর্ঘ্য ০.৬৫-১.২ মিটার।(২ফুট-৪ ফুট)।উচ্চতা ৪৬-৫৬ সে.মি।

সাধারণত গীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট,শুকনো বনভূমি, ছোটবন এমনকি ম্যানগ্রোভ জলাভূমিতেও এরা বাস করে।

বন্য অবস্থাতে ১২-১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।বেশীরভাগ বিড়ালপ্রজাতির মতো এরাও একাকী শিকার করে।ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৬৫ কি.মি বেগে দৌড়াতে পারে।

গোড়ালিতে বিশেষ জয়েন্ট থাকার কারণে মেঘলা চিতা তাদের গোড়ালিকে প্রায় ১৮০° কোণে ঘোরাতে পারে।ফলে এরা যেমন গাছের উপরে উঠতে পারে,তেমন বেঁয়ে নিচেও নামতেও পারে।এমনকি গাছে উল্টো করে ঝুলেও থাকতে পারে।

শরীরের লোমের বিশেষ রঙ এদেরকে গাছপালা ও আশেপাশের পরিবেশের সাথে মিশে থাকতে সাহায্য করে।

প্রকৃতিতে এদের কোনো আলাদা উপপ্রজাতির অস্তিত্ব নেই।পূর্বে সুন্দ্রা মেঘলা চিতাকে এদের উপপ্রজাতি মনে করা হলেও জিনগতভাবে এরা আলাদা।

বর্তমানে বাংলাদেশ,চীন,ভারত,নেপাল,ভুটান,মিয়ানমার,মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,লাওস,ভিয়েতনাম,কম্বোডিয়াতে এদের দেখা যায়।পূর্বে তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরেও এদের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে তারা এই দেশগুলো থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।

বাংলাদেশর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো অল্পসংখ্যক মেঘলা চিতা দেখা যায়।বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে।

৯.ইউরেশিয়ান লিংক্সঃ (Lynx lynx)

প্রকৃতিতে চার প্রজাতির (আইবেরিয়ান,ইউরেশিয়ান,কানাডিয়ান,ববক্যাট) লিংক্সের অস্তিত্ব আছে।এর মধ্যে ইউরেশিয়ান লিংক্স সবচেয়ে বড়।

এদের গড় ওজন ১৭-২২ কেজি।তবে এখন পর্যন্ত ৩৮ কেজি ওজনের ইউরেশিয়ান লিংক্সও পাওয়া গেছে।

দৈর্ঘ্য ০.৭-১.১ মিটার ( ২’৩” “-৩’৭”)।উচ্চতা ৬০-৭১ সে.মি।

লিংক্স প্রায় ১৫-১৭ বছর পর্যন্ত বাঁচে।একা শিকার করতে পছন্দ করে।ঘন্টায় প্রায় ৮০ কি.মি বেগে দৌড়াতে পারে।

এদের লেজ অন্যান্য বিড়ালজাতীয় প্রাণীর তুলনায় ছোট।লেজের ডগা কালো পশম দিয়ে তৈরি,যা অন্য লিংক্সদের সাথে যোগাযোগ করার সময় একটি দৃশ্যমান সংকেত হিসেবে কাজ করে।

সাধারণত ইউরোপ ও রাশিয়ার পত্রঝরা ও মিশ্র বন,মধ্য এশিয়ার ঘনবন,আধা মরুভূমি,হিমালয় পর্বতের উত্তর ঢাল,অনুর্বর পাথুরে অঞ্চল এমনকি আর্কটিক তুন্দ্রা অঞ্চলেও এদের দেখা মেলে।বিভিন্ন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রবণতার জন্য এদের সংখ্যা এখনো স্থিতিশীল।

প্রকৃতিতে প্রাপ্ত চারটি (বলকান,তুর্কিস্তান,ককেশীয়,কার্পাথিয়ান) উপ-প্রজাতির মধ্যে বলকান লিংক্সকে অত্যন্ত বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বর্তমানে এশিয়া ও ইউরোপের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে এদের দেখা যায়।এরমধ্যে বলকান অঞ্চল,স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চল,রোমানিয়া,পোল্যান্ড,জার্মানি,রাশিয়া,ফ্রান্স,চীন,কাজাখস্তান,উজবেকিস্তান,তুর্কমেনিস্তান,তাজিকিস্তান,আফগানিস্তান,মঙ্গোলিয়া,ভারত,নেপাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ইউরেশীয় লিংক্স রাশিয়াতে দেখা যায়।

১০.কারাকালঃ (Caracal caracal)

কারাকালের গড় ওজন ৮-১৯ কেজি।দৈর্ঘ্য ০.৬-১.১ মিটার।(২’-৩’৭”)। উচ্চতা ৪০-৫০ সে.মি।

এদের গড় আয়ু ১০-১২ বছর।একাকী শিকার করতে পছন্দ করে।স্বভাবে অনেকটাই হিংস্র।ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কি.মি বেগে দৌঁড়াতে পারে।

এরা ৪ মিটার (১৩ ফুট) এর বেশী উচ্চতায় শুন্যে লাফিয়ে উঠে পাখি ধরতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি ও শুষ্ক অঞ্চল,আফ্রিকার ঘনবন ও সাভানা,মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি ও পাথুরে অঞ্চলে এরা বাস করে।

বর্তমানে এদের নয়টি উপ-প্রজাতি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাস করে।বেশীরভাগ বিড়াল প্রজাতি বিপন্ন অবস্থায় থাকলেও প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে।তবে এশিয়া অঞ্চলে কারাকালের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।

বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা,মরক্কো,আলজেরিয়া,তিউনিসিয়া,পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চল,মধ্যপ্রাচ্য,তুর্কমেনিস্তান,উজবেকিস্তান,পশ্চিম ভারত,দক্ষিণ তুরস্ক,ইরানে কারাকালের দেখা মেলে।

তবে বাংলাদেশে এদের থাকার কোনো রেকর্ড নেই।

পড়তে পারেনঃ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো!!পর্ব-২

তথ্যসূত্রঃ
১.https://www.wikipedia.org/
২.https://a-z-animals.com/animals/lion/facts-lion/countries-with-lions/
৩.https://www.worldwildlife.org/species/tiger
৪.https://www.worldwildlife.org/species/jaguar
৫.https://animals.sandiegozoo.org/animals/mountain-lion-puma-cougar
৬.https://thebigcatsanctuary.org/news/a-guide-to-pumas/
৭.https://www.nationalgeographic.com/animals/mammals/facts/leopard
৮.https://www.awf.org/wildlife-conservation/leopard
৯.https://animals.sandiegozoo.org/animals/leopard
১০.https://cheetah.org/learn/about-cheetahs/
১১.https://www.britannica.com/animal/cheetah-mammal
১২.https://www.worldwildlife.org/species/cheetah
১৩.https://www.worldwildlife.org/species/snow-leopard
১৪.https://www.britannica.com/animal/snow-leopard
১৫.https://snowleopard.org/snow-leopard-facts/behavior/
১৬.https://zooatlanta.org/animal/clouded-leopard/
১৭.https://thebigcatsanctuary.org/news/a-guide-to-the-eurasian-lynx/
১৮.https://thebigcatsanctuary.org/news/a-guide-to-the-caracals/
১৯.https://animals.sandiegozoo.org/animals/caracal
২০.https://www.catsg.org/living-species-cloudedleopard

Back To Top