মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগ একটি অতি সাধারণ রোগ।এর কারণে মরিচের ফলন ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে।মরিচের এই রোগ অনেকগুলো কারণে হতে পারে।চলুন আজ জেনে নেই এই রোগটির কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
রোগের কারণঃ
মূলত মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগ দুটি কারণে হয়ে থাকে।
প্রথমত এফিড,থ্রিপস বা জাবপোকার আক্রমণে।
দ্বিতীয়ত ভাইরাসজনিত কারণে যেটা সাদামাছির মাধ্যমে মরিচগাছে ছড়ায়।
এফিড,থ্রিপস বা জাবপোকা মরিচের কচিপাতা,ডগা ও পাতার নিচের অংশের মূল্যবান রস শোষণ করে ও ফলে পাতার নিচের অংশ কুঁকড়ে যায়।গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
অপরদিকে বেগমো ভাইরাসের আক্রমণের ক্ষেত্রে পাতায় সবুজ-হলুদের মিশ্রণ ও কোঁকড়ানো থাকবে।গাছের ডগায় কুশি থাকবে।তবে এফিড,থ্রিপস বা জাবপোকার আক্রমণের ক্ষেত্রে ডগায় কোনো কুশি দেখা যায়না।
এই রোগ চারা অবস্থায় ও গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়।
লক্ষণঃ
১)মরিচের পাতার কিনারা উপরের দিয়ে মুড়িয়ে গিয়ে অনরকটা নৌকার খোলের মতো দেখায়।
২)পাতার মধ্যবর্তী শিরা হলুদ হয়ে যায়।
৩)নতুন গজানো পাতা আকারে ছোট হয়ে যায়।
৪)পুরাতন পাতা ভঙ্গুর হয়ে যায়।
৫)গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
৬)মরিচ আকারে ছোট ও গুচ্ছাকারে ধরে।
প্রতিরোধঃ
১)ভাইরাসমুক্ত মরিচের জাত ব্যবহার ও ভাইরাসমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
২)সাদামাছি প্রতিরোধে জমির চারপাশে ভুট্টা,জোয়ার বা বজরার চাষ করতে হবে।
৩)চারাগুলো নাইলনের ক্ষুদ্র ছিদ্রবিশিষ্ট নেটের মধ্যে লাগাতে হবে।
৪)আক্রান্ত গাছের অংশগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৫)ক্ষেত বা টব পরিষ্কার রাখতে হবে।
৬)সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হল চটচটে হলুদ ফাঁদ ব্যবহার।বাজারে এটি হলুদ আঠালো ফাঁদ নামে পাওয়া যায়।
প্রতিকারঃ
যদিও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েও খুব কম ক্ষেত্রেই এ রেগের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব হয়।যদি রোগের বিস্তার বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।তবে প্রথমে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত।
জৈব নিয়ন্ত্রণঃ✅
সাদামাছি ও অন্যান্য পোকার দমনে নিমের তেল বা কেরোসিন খুব ভালো ফলাফল দেয়।
১লিটার পানিতে ১ চা চামচ (৫ মিলি) নিমের তেল বা কেরোসিন মিশিয়ে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে এমনভাবে স্প্রে করতে হবে যেনো গাছের পাতাগুলো একদম ভিজে যায়।
যেহেতু পোকাগুলো পাতার নিচে থাকে,সেহেতু পাতার নিচের অংশ ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
এভাবে ৭ দিন পরপর ১ মাসে ৪ বার স্প্রে করতে হবে।
রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণঃ✅
প্রথমত এই রোগ দমনে আমরা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবো।এতে খুব ভালো ফলও পাওয়া যায়।তবে রোগের বিস্তার বেড়ে গেলে রাসায়নিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ আয়তনে বাংলাদেশের বড় দশটি উপজেলা।
রাসায়নিক বালাইনাশকের ক্ষেত্রে ইমিডাক্লোপ্রিড বা ডাইমেথয়েট অধিক কার্যকরী।
প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি বা ৮/১০ ফোটা ওষুধ মিশিয়ে ১০ দিন পর পর গাছে স্প্রে করে ও রোগ দমন সম্ভব।
ইমিডাক্লোপ্রিড বাজারে এডমায়ার,টিডো ২০এসএল,ইমিটাফ,গেইন ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।
ডাইমেথয়েট বাজারে টাফগর ৪০ইসি,সুনোগোর,ডাইমেথিওন
,রগর,স্টার্টার নামে পাওয়া যায়।
তবে এদের মধ্যে ডাইমেথয়েট জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করাই উত্তম কেননা ইমিডাক্লোপ্রিড প্রয়োগে মৌমাছিসহ বিভিন্ন উপকারী পোকাও মারা যেতে পারে।বিশেষ করে গাছে ফুল থাকা অবস্থায় এটি প্রয়োগ না করাই ভালো।
রোগের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে গেলে ডিনেটোফুরান জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।এটি বাজারে টোকেন ২০এসজি,ডিস্কো,দুরা ২০ডব্লিউজি,যোদ্ধা,ডিনোটে ২০এসজি হিসেবে পাওয়া যায়।
🔴লেখকঃ
কৃষিবিদ ইমরানুজ্জামান হৃদয়
বিএসসি (কৃষি)
এমএসসি (কীটপতঙ্গবিদ্যা)
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।
তথ্যসূত্র:
১.https://plantdiseaseclinic.com/
২.https://plantix.net/en/
৩.https://www.sciencedirect.com/topics/agricultural-and-biological-sciences/chilli-leaf-curl-virus
৪.https://www.researchgate.net/publication/320991434_Chilli_Leaf_Curl_Virus_an_Emerging_Threat_to_Chilli_in_India
৫.https://dae.portal.gov.bd/sites/default/files/files/dae.portal.gov.bd/page/8a812db0_3544_4105_b066_df78074d3efb/Registered%20Agricultural%20PesticidesList%20(4).pdf
৬.https://www.aciar.gov.au/publication/books-and-manuals/tomato-capsicum-chilli-and-eggplant-field-guide-english